November 17, 2025, 12:17 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
পাটুরিয়ায় পাঁচ ফেরিঘাটের মধ্যে সচল মাত্র একটি জামায়াত ক্ষমতায় এলে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা কর হবে ভেড়ামারায় বিএনপি প্রার্থীর কবর জিয়ারত— ধর্মীয় আবেগও কি দলীয় রাজনীতির ছোবলে? কুষ্টিয়ার ২জনসহ মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১২ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ কুষ্টিয়া-১ আসনে এনসিপির প্রার্থী হতে আগ্রহী নুসরাত তাবাসসুম ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন, যৌথবাহিনীর অভিযান জোরদার গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একই দিনে অবরোধ/সাড়ে চার ঘণ্টা পর স্বাভাবিক যান চলাচল ঢাকা–খুলনা মহাসড়কে রাজবাড়ীতে থেমে থাকা বাসে কুষ্টিয়াগামী এসবি পরিবহনের ধাক্কা, আহত ১৫ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা: শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায় ১৭ নভেম্বর

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস/একটি জাতির প্রথম সরকারের জন্ম হয় যেভাবে

ড. আমানুর আমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক কুষ্টিয়া ও দি কুষ্টিয়া টাইমস/
আজ ১৭ এপ্রিল, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস নামে পরিচিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এ দিনটি ; সেদিন নির্বাচিত ১৬৭ জন এমএনএ এবং ২৯৩ এমপি একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করছিল। তাদের নেতৃত্বেরই এইদিনেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় এবং এ সরকারের ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। অন্যদিকে, একটি স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জাতিয়-আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় এবং বাংলাদেশের জনগণকে তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্ল¬বী কার্যক্রমের মাধ্যমে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে অদম্য স্পৃহায় মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এই সরকার গঠনের ফলে বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামরত বাঙালিদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত হয়। সর্বোপরি, ৯ মাস যুদ্ধের পর এই মুজিবনগর সরকারের হাত ধরেই ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। তাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এবং চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
বলা হয়ে থাকে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতা সূর্য অস্ত যায়। এর প্রায় ২০০ বছর পর ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বর্তমান মেহেরপুরের মুজিবনগর আম্রকাননে স্বগর্বে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্য।
প্রেক্ষাপট/
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ম্যান্ডেট দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞে নেমে পড়ে বাংলার আনাচে-কানাচে। বন্দী করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। দেশজুড়ে শুরু হয় স্বাধীনতাকামী জনতার প্রতিরোধ যুদ্ধ ; মুক্তির যুদ্ধ। কিন্তু এ যুদ্ধের বৈধতা প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজন ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা, অস্ত্র সুরক্ষা এবং প্রশিক্ষণ। প্রয়োজন ছিল কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় করা।
অন্যদিকে, একটি যুদ্ধরত বাংলা ভূখন্ডে একটি বৈধ স্বাধীন সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ছিল একটি মুক্তাঞ্চল। এ লক্ষ্যে তৎকালীন কুষ্টিয়া অঞ্চলকে ঘিরে শুরু হয় পরিকল্পনা।
কুষ্টিয়ার মাটিতেই ১৯৭১ সালের ০৩ মার্চ প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। ঐ দিন কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মাঠে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় লাল সবুজের ছয়টি তারা খচিত একটি পতাকা স্বাধীন বাংলার পতাকা হিসাবে উড়িয়ে দেয়া হয় ; পাঠ করা হয় স্বাধীন বাংলার ইশতেহার। ২৩শে মার্চ কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে পূনরায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়া ছিল ৮ নং সেক্টরের অধীনে। যশোর, কুষ্টিয়া জেলা, দৌলতপুর, সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলা এবং ফরিদপুরের কিছু অংশ নিয়ে এই সেক্টর গঠিত। সাতটি সাব-সেক্টর নিয়ে গঠিত এই সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল কল্যাণীতে। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (পরবর্তীকালে লে. কর্নেল ) এবং পরে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এম.এ মঞ্জুর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।আবু ওসমান চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মেজর পদে কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন। পাকি সরকারের অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলে ২৬ মার্চ তিনি কুষ্টিয়ার চুয়াডাঙার ঘাঁটিতে পৌঁছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে সসৈন্য যোগ দেন এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। সেখানে পৌঁছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, পদ্মা-মেঘনার পশ্চিমাঞ্চলকে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গন নামকরণ করে নিজেকে অধিনায়ক ঘোষণা করেন। ৪র্থ ইপিআর সদর দফতরে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে লাল সূর্যের মাঝে মানচিত্রখচিত বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সালাম প্রদান করেন।
তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দেয়া নকশার উপর ভিত্তি মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরী কুষ্টিয়ার মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত জয় বাংলা বাহিনী নিয়ে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সাথে প্রথম সন্মুখ সমরে অবতীর্ণ হন ৩০ মার্চ।
১ এপ্রিল বাংলাদেশের মধ্যে কুষ্টিয়া প্রথম শক্রমুক্ত হয়।বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র কুষ্টিয়া জেলা ১৬ দিন শত্রুমুক্ত থাকে। আর এই ১৬াট দিনই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের রক্ত¯œাত পথে এক সনজীবনির মতো। স্বাধীনতার মহানায়ক বাঙালীর সকল ত্যাগের প্রধান অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্থানের অন্ধকার কারাগারে বন্দী, যখন পাকিস্থান বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিশে^র কাছে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে দেখাতে মরিয়া তখন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অন্য মহান নেতৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশ ভারত থেকে একটি স্বাধীনতার ইশতেহার তৈরি করেন। সেই ইশতেহার ঘোষণার জন্য বাংলাদেশের ভুমিতে খুব প্রয়োজন ছিল একটি মুক্তাঞ্চল। প্রতিরোধ যুদ্ধে ‘স্বাধীন’ হওয়া সেদিনের কুষ্টিয়াঞ্চল ছিল সেই ভুমি ; কুষ্টিয়ার অন্যতম মহকুমা মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলা)। সেখানে দাঁড়িয়েই সেদিন ঘোষিত হয় বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার। যে সরকারের অধীনে পরিচালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ।
জীবিত থাকাকালীন সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরী একটি পত্রিকা সাক্ষাতকারে বলেন কুষ্টিয়াই একমাত্র জেলা যেটা শত্রুমুক্ত হয় যুদ্ধের প্রথম এক সপ্তাহের মধ্যেই। এর ধারাবাহিকতায় আমরা মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণের জন্য মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলতে এবং সেই এলাকা প্রস্তুত করতে পেরেছিলাম।”
সেদিন যে সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল তা খুবই কঠিন কাজ ছিল। বিশ^ সম্প্রদায়ই সেদিন এরকই আখ্যা দিয়েছিল। এ সরকার গঠনের পেক্ষাপট তাই সেদিন বিদেশী সাংবাদিক, কাটনীতিকদের আগ্রহের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল। সেদিন যদি এটি গঠন করা না হতো তাহলে দেশুজড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া জনযুদ্ধ ও আন্দোলনগুলি কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যেত না এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে এতো বেগবান করা যেতো না।

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net