November 21, 2024, 7:47 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট নাগরিক প্রয়োজনে আজকের শিশুদের মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ, তারাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট জনগোষ্ঠী।
আজ শুক্রবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, শিক্ষকদের কথা মান্য করা, অভিভাবকদের কথা মান্য করাসহ প্রতিটি শিশুকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। সবাইকেই উন্নত মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হতে হবে। যারা প্রতিবন্ধী বা অক্ষম তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে কোনো শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না, কোনো মানুষই ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হবে না, প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আগামীর বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’
তার সরকার শিশুদের সুরক্ষার জন্য সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আগামীতে ২০৪১ সালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আমরা গড়তে চাই এবং আজকের শিশুরাই হবে সেই আগামী দিনের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। যারা এই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মাধ্যমে আজকের শিশুদের উন্নত নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার আহবান জানান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা শিশুদের ভালবাসতেন। শিশুদের জন্য তার অত্যন্ত দরদ ছিল এবং শিশুদের সঙ্গে খেলা করতেও তিনি ভালবাসতেন। এজন্য তার জন্মদিনকে আমরা ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা শেখ মুজিবের জন্মস্থান। এই মাটিতে তিনি জন্ম নিয়েছেন, বড় হয়েছেন এবং এই মাটিতেই তিনি শায়িত। নিজের জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য। তার ভেতর যে মানবিকতা রয়েছে, মানুষের প্রতি দরদ, শিশুকাল থেকেই সেটা দেখা গেছে। যখন স্কুলে পড়তেন তখন থেকেই দরিদ্র কোনো শিক্ষার্থী যার বই নেই তাকে বই দিয়ে দিতেন। নিজের গায়ের কাপড় খুলে দরিদ্র মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দুর্ভিক্ষের সময় নিজের গোলার ধান পর্যন্ত মানুষের মাঝে বিলিয়েছেন।
সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা কেবল স্বাধীনতাই এনে দেননি। তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে যে সংবিধান দিয়েছিলেন, সেখানেই শিশু অধিকারের কথা বলা আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারীকরণের মাধ্যমে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন। দুঃস্থ-অনাথ শিশুদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষে জাতীয় শিশু আইন, ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন। তিনি এসব শিশুদের জন্য ‘কেয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে সরকারি শিশু পরিবার নামে পরিচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে পুনরায় সরকার গঠনের পর আমরা জাতীয় শিশু শ্রমনীতি, ২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০, জাতীয় শিশুনীতি, ২০১১, এবং মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশু খাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করেছি। ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি সরকারি রেজিস্টার্ড ও কমিউনিটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ১ লাখ ৫ হাজার ৬১৬ জন শিক্ষকসহ জাতীয়করণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার সম্প্রসারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদানের উল্লেখ করে বলেন, ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরিমার্জিত কারিকুলাম অনুযায়ী বছরের প্রথম দিনে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যবই বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে কম্পিউটার কোডিং পদ্ধতি এবং শিখন-শেখানো কার্যক্রমে ব্লেন্ডিং অ্যাপ্রোচ প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের দক্ষতা বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল। শিশুদের পক্ষে বক্তব্য রাখে স্বপ্নিল বিশ্বাস। শিশু প্রতিনিধি স্নেহা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে দুই শিশু রুবাবা তোহা জামান ও এ এল শরফুদ্দিন। শুরুতে ‘বঙ্গবন্ধু ও শিশু অধিকার’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রাঙ্কন এবং জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতা এবং আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমানের লেখা ‘শিশুদের শেখ মুজিব’ শিরোনামের একটি সচিত্র বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাচিত সেরা চিত্রকর্মটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক হিসেবে উপহার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply