November 21, 2024, 8:28 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ‘সুপ্রিম কোর্ট বার নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে সে সমস্যা মেটাতে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন প্রধান বিচারপতি। বিচার বিভাগকে ‘আস্থাহীনতা’ থেকে রক্ষা করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
তিনি বলেন বার নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে, সেখানে তো সাবেক স্পিকার জমিরউদ্দিন সরকার, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আমীর-উল ইসলাম ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন রয়েছেন। তাঁরা থাকতে সেখানে কেন আমাকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এমন প্রশ্ন তো কেউ তোলেন না? তাঁরা কি প্রধান বিচারপতির চেয়ে কম জ্ঞানী?’
সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির সাতক্ষীরায় সফর উপলক্ষে আইনজীবী সমিতি আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা মানুষের কষ্টটা ধারণ করবেন, রাষ্ট্রের মালিক তো জনগণ, আমি-আপনি না। এই দেশের যত কোটি মানুষ আছে তারাই এই রাষ্ট্রের মালিক। এটা আমি বলছি তা নয়, এটা আমাদের শাসনতন্ত্র (সংবিধান) বলেছে। যারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে এই শাসনতন্ত্র আমাদেরকে দিয়েছেন – তাতে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ।
“এই জনগণ যদি কোনো কারণে বিচারালয়ে এসে হয়রানির শিকার হয়, সংক্ষিপ্ত সময়ে যদি বিচার না পায়, তাহলে একদিন তারা বলবে দেশে বিচার-আচার নেই অর্থাৎ বিচার বিভাগের প্রতি যে আস্থাহীনতা এইটা দিনে দিনে বাড়বে, আমরা এটা হতে দিতে পারি না। রাষ্ট্রের অন্যতম অঙ্গ বিচার বিভাগকে আমরা দুর্বল হতে দেব না।”
বিচার বিভাগের চাকা আরও গতিশীল করতে তিনি আইনজীবীদের প্রতি এই বিভাগকে সহযেগিতা করার আহ্বান জানান।
“যারা মাসের পর মাস বছরের পর বছর ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য আদালতে ঘোরে, তাদের যেন একদিন আগে হলেও বাড়িতে পাঠাতে পারি। অন্তত একদিন হলেও সে স্বস্তিতে থাকবে এবং বলবে আমার মামলা দ্রুত শেষ হয়েছে।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ যখন অভিশাপ দেয় তখন দুটো কথা বলে, হয় বলে তুই দ্বিতীয় বিয়ে কর, না হয় বলে, তোর বাড়িতে মোকদ্দমা ঢুকুক। মোকদ্দমায় পড়ে মানুষ দিনের পর দিন বছরের পর বছর একদম সর্বস্বান্ত হয়ে যায়।
“এটা তো একটা স্বাধীন দেশে হতে পারে না। আমরা হতে দিতে পারি না। এজন্যে একাত্তর হয়নি, এই জন্যে ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দেয়নি, ২ লক্ষ মা-বোন ইজ্জত দেয়নি।”
প্রত্যেক রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ আছে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ।
প্রত্যেকটা অঙ্গ বা বিভাগ যাদি সুষ্ঠুভাবে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে তবে কোনো সমস্যা থাকার কথা না এবং এটা করতে পারলে রাষ্ট্র ও দেশ অবশ্যই এগিয়ে যাবে বলে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মনে করেন।
বিচার বিভাগকে একটি পাখির সঙ্গে তুলনা করে প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, বিচার বিভাগ যদি একটি পাখি হয়, বার তার একটি পখা এবং বেঞ্চ অপর একটি পাখা। পাখির যদি একটি ডানা ভেঙে যায় বা দুর্বল হয়ে যায় ওই পাখিটি উড়তে পারে না।
“ঠিক তেমনি বার যদি দুর্বল হয়, বার যদি সঠিকভাবে বেঞ্চকে আইনি সহযোগিতা না করে, তাহলে বেঞ্চ থেকে বার ভালো জাজমেন্ট আশা করবে কেমন করে?”
তিনি একই প্রশ্ন সাতক্ষীরার আইনজীবীদের উদ্দেশে করেন, “আমি শুনেছি সাতক্ষীরা বারও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এখানে সিনিয়র এডভোকেট গোলাম মোস্তফা ও এডভোকেট এস এম হায়দার সাহেবদের মতো বিজ্ঞ আইনজীবীসহ অনেক সিনিয়র আইনজীবী থাকতে এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। তাদের সমস্যা সমাধানে বাইরের লোকের মাথা ঘামাতে হবে কেন? তাদের সমস্যা তারা কেন সমাধান করতে পারবেন না?”
প্রধান বিচারপতি সবাইকে এক হয়ে বিচার বিভাগকে এগিয়ে নেওয়ার এবং মামলা জট কমানোর চেষ্টা করার আহ্বান জানান।
জেলা আইনজীবী সমিতি পরিচালনা কমিটির আহবায়ক জিপি শম্ভুনাথ সিংহের সভাপতিত্বে এবং পিপি আব্দুল লতিফ ও অতিরিক্ত পিপি অনিত মুখর্জীর পরিচালনায় সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমায়ূন কবীর, পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. গোলাম মোস্তফা ও সাতক্ষীরা ল কলেজের অধ্যক্ষ এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম হায়দার।
এর আগে স্মৃতিবিজড়িত সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ পরিদর্শন করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দীকী। তিনি কলেজের সমগ্র এলাকা ঘুরে দেখেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি সেখানে যাওয়ার পর তিনি কলেজ জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি অতি সাধারণের মতো সাতক্ষীরার সে সময়ে শিক্ষক শেখ আব্দুল ওয়াদুদের বাসায় যান। শিক্ষকের খোঁজখবর নেন, কুশল বিনিময় করেন। সহপাঠীদেরও খোঁজখবর নেন।
প্রধান বিচারপতি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ১৯৭৫-৭৬ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এখান থেকে তিনি স্নাতক পাশ করেন।
বিকাল ৩টায় তিনি জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিচাপ্রার্থীদের বসার জন্য নির্মিত বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’ উদ্বোধন করেন।
Leave a Reply