March 18, 2025, 8:09 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
দেশে খাদ্যের মজুত বৃদ্ধিতে ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত কারন এডিপি কাটছাঁট/বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাসের লক্ষ্য/কুষ্টিয়ায় ৭,০০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক অঞ্চল কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর দফায় দফায় হামলা, আহত ১৫ আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন মৌসুমের প্রথম মৃদু তাপপ্রবাহ ১২ জেলায়, মধ্য মার্চে এমনটা কিছুটা অস্বাভাবিক আবরার হত্যা/২০ জনের মৃত্যুদন্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল যুগেরও বেশী সময়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবারও ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন মাগুরায় আছিয়ার পরিবারকে ‘পাকা বাড়ি’ করে দিবে জামায়াত বড়দের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়া যাবে না, ইউক্রেনকে ট্রাম্প

কুষ্টিয়া সেক্টর/প্রতিমাসে শত কোটি টাকার চোরাচালান, ১০ মাসে জব্দ ২৭৯ কোটি টাকার পণ্য

শুভব্রত আমান, কুষ্টিয়া
সীমান্তরক্ষীদের কঠোর নজরদারী সত্বেও থামানো যাচ্ছে না কুষ্টিয়া সেক্টরের অধীনে চোরাকারবারী। রাজনৈতিক ছত্রছায়া, জনপ্রতিনিধি, একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণ, ভৌগলিকভাবে নদী পথের আধিক্য প্রভৃতি কারনে এ সেক্টরের অধীনে কুষ্টিয়াসহ চার জেলার ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা চোরাকারবারিদের জন্য একটি সুবিধাজনক স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
জেলাগুলো হল কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর।
বিভিন্ন অবৈধ পণ্য, বিশেষ করে মাদকদ্রব্য, অস্ত্র, সোনা, এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ সামগ্রীর চোরাচালান এই সীমান্তগুলো দিয়ে নিয়মিতভাবে হচ্ছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিমাসে শত কোটি টাকার পণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে পার করা হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
এর মধ্যে গত ১০ মাসে ২৭৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ করা হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত কুষ্টিয়া সীমান্ত এলাকায় বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) চোরাচালানি পণ্য আটক করেছে।
বিজিবির উপ-মহাপরিচালক ও কুষ্টিয়া সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মো. মারুফুল আবেদীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া সদর (৪৭ বিজিবি) এবং এর অধীনস্থ মহেশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) ও চুয়াডাঙ্গা ব্যাটালিয়নের (৬ বিজিবি) মোট ৬২টি বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) এই অভিযানে অংশ নেয়। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর সেক্টরের টিম প্রায় ১৬০ কোটি ১ লাখ ২১ হাজার টাকার মাদক উদ্ধার করেছে। বাকি পণ্য অন্য দুই ব্যাটালিয়েনর।
সীমান্ত সংলগ্ন ও সীমান্ত সম্পর্কে ধারনা রয়েছে এমন বিভিন্ন মহল বলছে ঐ চার জেলার ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত পথের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিজিবির উক্ত তিন ব্যাটালিয়নের বিদ্যমান কাঠামোয় যথেষ্ট নয়। এই বিশাল সীমান্তের বেশীরভাগ উন্মুক্ত থাকায় এই এলাকা দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবারিদের জন্য উপযুক্ত রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সীমান্তে পর্যাপ্ত সুরক্ষা বেষ্টনী না থাকায় চোরাকারবারিরা সহজেই এই পথ দিয়ে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ পণ্য পরিবহন করছে। এ জেলাগুলোর মধ্যে প্রায় ৪০টিরও বেশী চোরাচালান রুট রয়েছে যেখানে ১০০’র বেশী সিন্ডিকেট রয়েছে। প্রতিদিন এসব চোরাপথে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তরি-তরকারিসহ শাড়ী, থ্রিপিস/শার্টপিস/চাদর/কম্বল/তৈরী পোশাক, কসমেটিক্স সামগ্রী, কাঠ, চা পাতা, চিনি, সার, কয়লা, মোবাইল ডিসপ্লে­, চশমা, সুতা/কারেন্ট জাল, সুপারি, রসুন, পিঁয়াজ, জিরা, যানবাহন, ট্রলি, নৌকা, সিএনজি/ইজিবাইক, বাইসাইকেল আসছে।
অন্যদিকে, মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের মধ্যে ইয়াবা ট্যাবলেট, ক্রিস্টাল মেথ আইস, হেরোইন, ফেনসিডিল, বিদেশী মদ, বাংলা মদ, বিয়ার, গাঁজা, বিড়ি ও সিগারেট, নেশাজাতীয় ট্যাবলেট/ইনজেকশন, ইস্কাফ সিরাপ, কোকেন, এমকেডিল/কফিডিল, বিভিন্ন প্রকার ঔষধ যেমন এ্যানগ্রো/সেনেগ্রা ও অন্যান্য ট্যাবলেট পণ্য অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- পিস্তল, গান জাতীয় অস্ত্র, রাইফেল, রিভলবার, গেনেড, রকেট বো¤ব গুলি।
অপরদিকে, বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণ, রৌপ্য, সাপের বিষ, ইলিশ মাছ, সহ অন্যান্য মূল্যবান মালামাল ভারতে পাচার হচ্ছে।
সীমান্ত নিয়ে কাজ করেছেন কুষ্টিয়ার বেসরকারী সংস্থা রবীন্দ্র সংসদের নির্বাহী পরিচালক সাথী নজরুল ইসলাম জানান, সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কিছু মানুষ চোরাচালানকেই প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে, যা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য উচ্চ ঝুঁকি গ্রহণে প্রলুব্ধ করছে। ফলে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য ও স্থানীয় চাহিদা কমানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
নজরুল জানান, এদেরকে নানাভাবে সুরক্ষা দেয়া হয়। এই সুরক্ষাদাতারা হলেন এলাকার একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি যারা নিজেরাও চোরাচালানের সাথে জড়িত।
এছাড়াও, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আর্থিক সুবিধা ও দ্রত লাভের প্রলোভনে অনেকেই চোরাচালানে যুক্ত হচ্ছেন, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় একটি বড় বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া সীমান্তের একাংশের মানুষ চোরা কারবারকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। ফলে ঝুঁকি সত্ত্বেও বেশি আয়ের উত্স হিসেবে তারা ঝুঁকছে চোরাকারবারিতে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে চোরাকারবারী ধরা পড়লেও এদের কারনে অনেক সময় নিস্পত্তি করে ফেলতে হয়। চোরচালান পণ্য রেখে ছেড়ে দিতে হয় কারবারীকে। তবে একটি মোটা দাগে মামলাও হয়ে থাকে।
কুষ্টিয়া জজ কোর্টের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম। তিনি জেলার দৌলতপুরের বাসিন্দা। তিনি জানান, তার সেরেস্তাতেই প্রায় শ’খানেক মামলা রয়েছে।
কুষ্টিয়ার দেলৈতপুরের সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম জানান, কুষ্টিয়ার চোরাচালান মূলত এই দৌলতপুর উপজেলা কেন্দ্রীক। তার মতে, এ উপজেলার পুরোটাই পদ্মা নদী বেষ্টিত এবং যার ওপাড়েই ভারত সীমান্ত। চোরাচলানের বেশীরভাই এই নদী পথে সংঘটিত হয়ে থাকে। এত উনমুক্ত নদী পথ সামাল দেয়া বিজিবির পক্ষে কঠিন।
বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, চোরাকারবারিদের দমন ও সীমান্তের নিরাপত্তায় দুই-তিন কিলোমিটার পরপর স্থাপিত বিওপিতে বিজিবি নিযুক্ত থাকলেও আইনের চোখ এড়িয়ে দুর্গম চোরাপথে আসছে পণ্য সামগ্রী। অবৈধ এসব চালানের একাংশ ধরা পড়লেও থামছে না চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য।
তারা জানান, মূলত দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ পণ্যের চাহিদা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে মাদকের। তারা জানান, সীমান্তের ওপাড়ে মাদকের বিভিন্ন ব্যান্ডের মূল্যও তুলনামূলক কম।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মতে, মাদক আমদানি এবং চোরাচালান দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং এ ধরনের অপরাধ দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) ও কুষ্টিয়া সদর সেক্টরের উপ-মহাপরিচালক কর্নেল মো. মারুফুল আবেদীন জানান, বিজিবি সদস্যরা সব সময় সজাগ থাকলেও, কিছু চোরাচালানকারী আইন এড়িয়ে কাজ করে। তিনি জানান, চোরাচালান রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। আইন ভঙ্গকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন।
এই কর্মকর্তা বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্ত এলাকায় সুরক্ষা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন, নজরদারি বৃদ্ধি এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম আরও জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে। সেইসঙ্গে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে চোরাচালানের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা এবং তাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা জরুরি।
আমান,কুষ্টিয়া
৯/১১/২০২৪

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net