March 24, 2025, 5:06 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলায় জাসদ নেতা সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন হাসনাতের বক্তব্য ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’: নেত্র নিউজকে বলল সেনাসদর কুষ্টিয়ার সড়কে ত্রিমুখী সংঘর্ষে আহত ৪ জনের- ২ জনের মৃত্যু বিশ্ব পানি দিবস আজ ইসরায়েলের হামলায় পূর্ণ সমর্থন আমেরিকার ঝিনাইদহে বিএনপি কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে সুখী দেশের তালিকায়/১৪৭ দেশের মধ্যে ১৩৪তম বাংলাদেশ চলমান বৃষ্টিবলয়/ কুষ্টিয়ায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ এলাকায় সক্রিয় থাকবে, চলবে ৩/৪দিন বেনাপোল দিয়ে ফিরলেন ভারতে পাচার হওয়া ২১ কিশোর-কিশোরী দেশে খাদ্যের মজুত বৃদ্ধিতে ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত

কেন উত্তাল বাংলাদেশ? কেন এত বিতর্ক চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারি নিয়ে ?

সূত্র আনন্দ বাজার পত্রিকা/
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নেতা তথা সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি নিয়ে বাংলাদেশের একাংশ উত্তাল। সেই আঁচ এসে পড়েছে ভারতেও। তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
কিন্তু কী নিয়ে এত হইচই? কেন গ্রেফতার হলেন চিন্ময়কৃষ্ণ? গত কয়েক দিনে ঘটনাপ্রবাহও বা কোন দিকে গড়াল?
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় জন্ম চিন্ময়কৃষ্ণের। ছোট থেকেই তিনি সুবক্তা হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। পরে বাংলাদেশের ইসকনের সঙ্গে যুক্ত হন।
২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চিন্ময়কৃষ্ণ ছিলেন ইসকনের চট্টগ্রাম ডিভিশনের সেক্রেটারি। সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত করার দাবিতে গড়ে ওঠা মঞ্চ ‘সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’-এর মুখপাত্র করা হয়েছিল তাঁকে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘুদের অধিকারের দাবিতে কথা বলতেন তিনি। তাঁদের উপরে অত্যাচারের বিরুদ্ধে চিন্ময়কৃষ্ণ সরব হয়েছেন বার বার।
গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তার পর থেকে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। একাধিক হিন্দু মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে চট্টগ্রাম এবং রংপুরে। চট্টগ্রামে শুক্রবারও নতুন করে তিনটি মন্দিরে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সংখ্যালঘুদের অধিকারের দাবিতে চিন্ময়ের প্রচার এবং কর্মসূচি বেড়ে গিয়েছিল। অক্টোবরে চট্টগ্রামে সংখ্যালঘুদের নিয়ে তেমনই একটি সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন চিন্ময়। সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত।
চিন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অক্টোবরে চট্টগ্রামের সমাবেশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে একটি গেরুয়া পতাকা তুলেছিলেন তিনি। তাতে জাতীয় পতাকার ‘অপমান’ হয়েছে বলে অভিযোগ।
অক্টোবরের ওই সমাবেশের পর চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন চট্টগ্রামের বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মহম্মদ ফিরোজ় খান। সেখানে তিনি জানান, বাংলাদেশের পতাকার অবমাননা করেছেন চিন্ময়। অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশে নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি করে অশান্তি সৃষ্টিই চিন্ময়ের উদ্দেশ্য।
এর পরেও অবশ্য চট্টগ্রাম এবং রংপুরে একাধিক মিছিল, সভা ডেকেছেন চিন্ময়কৃষ্ণ। ২২ নভেম্বর রংপুরে তাঁর একটি সভায় বিপুল জমায়েত হয়েছিল।
২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন তিনি। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের পুলিশ। তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।
চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম এবং রংপুরে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পথে নামেন বাংলাদেশি সংখ্যালঘুরা। গত মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের সংঘর্ষে এক আইনজীবীর মৃত্যুও হয়েছে।
চিন্ময়কৃষ্ণ ইসকনের সদস্য ছিলেন। কয়েক মাস আগে সংগঠনের নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে ইসকন। তাঁর গ্রেফতারির পর ইসকনের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, চিন্ময়কৃষ্ণ তাঁদের কেউ নন।
পরে অবশ্য ইসকন এ-ও জানায়, চিন্ময়ের অধিকারের দাবিকে তারা সমর্থন করে। বাংলাদেশ ইসকনের তরফে নতুন বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, চিন্ময়কৃষ্ণকে তারা সমর্থন করে। আদৌ তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা হয়নি। বরং তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা ‘স্পষ্ট’ করে দেওয়া হয়েছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের তরফে ইসকনকে ‘ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল। চিন্ময়ের গ্রেফতারির পর বাংলাদেশের হাই কোর্টে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে চেয়ে মামলাও হয়। তবে তা খারিজ হয়ে যায়।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। চিন্ময়কৃষ্ণকে সঠিক এবং নিরপেক্ষ বিচারপ্রক্রিয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছে ভারত। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের কথাও বলা হয় এক বিবৃতিতে। সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের নিন্দা করেছেন ভারতীয়েরা। সমাজমাধ্যমে দু’দেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ চরমে।
ভারতের এই বিবৃতিকে ভাল চোখে দেখেনি ঢাকা। পাল্টা দাবি, ভারতের বিবৃতি আসলে ‘দ্বিচারিতা’। ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের পাল্টা অভিযোগও করে তারা।
বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে’ নাক গলানো উচিত হয়নি ভারতের। ও পার বাংলায় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখেও পড়ছে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকার। যদিও বাংলাদেশের তদারকি সরকারের বক্তব্য, সে দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদই রয়েছেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের ‘হস্তক্ষেপ’ পছন্দ করছে না মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্র্বতী সরকার।
রাষ্ট্রপুঞ্জে বাংলাদেশের তরফে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীন ভাবে ধর্মচর্চার অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘু-সহ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্র্বতী সরকারের লক্ষ্য।
উল্লেখ্য, চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের তরফে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিন্ময়কৃষ্ণের অনুরাগীরাই।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণের বিভিন্ন ঘটনা এবং ধর্মগুরু চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে ত্রিপুরা ও অসমে। আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনের সামনে এ দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছে হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামে একটি সংগঠন।
এই কর্মসূচি থেকে কয়েক জন বিক্ষোভকারী সহকারী হাই কমিশনের চত্বরে ঢুকে পড়ে পতাকাদণ্ডটি ভেঙে দেয়। অসমের শ্রীভূমি সীমান্ত দিয়ে কোনও পণ্য বাংলাদেশে না-পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানিও অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে।আগরতলায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসে হামলার জেরে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ভারতীয় দূতাবাস এবং উপদূতাবাসগুলির সামনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ। সে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে এ কথা জানানো হয়েছে। ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, ত্রিপুরার ঘটনার পর সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়।
সেখানে ভারত-বিরোধী বেশ কিছু স্লোগানও ওঠে। এই আবহে সোমবার রাতে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, ভারতীয় দূতাবাস এবং উপদূতাবাসগুলির সামনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপরম্পরা এবং বাংলাদেশের তপ্ত পরিস্থিতির কারণে আগাম সতর্কতা হিসাবে এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার চিন্ময়কৃষ্ণ মামলা উঠেছিল চট্টগ্রাম আদালতে। তবে মঙ্গলবারও জামিন পেলেন না বাংলাদেশের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। চট্টগ্রাম আদালতে এ দিন তাঁর জামিন মামলার শুনানির কথা ছিল। কিন্তু তা পিছিয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম সূত্রের দাবি, সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে আদালতে মামলা লড়ার জন্য মঙ্গলবার রাজি ছিলেন না কোনও আইনজীবী। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত এই মামলার শুনানি স্থগিত রেখেছে চট্টগ্রাম আদালত। ফলে আরও এক মাস জেলেই থাকতে হবে সন্ন্যাসীকে।
ঘটনাচক্রে ইসকনের কলকাতা শাখার মুখপাত্র রাধারমণ দাস সোমবার রাতে অভিযোগ করেছেন, চিন্ময়কৃষ্ণের আইনজীবীর উপর হামলা হয়েছে এবং তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net