November 13, 2025, 9:33 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একই দিনে অবরোধ/সাড়ে চার ঘণ্টা পর স্বাভাবিক যান চলাচল ঢাকা–খুলনা মহাসড়কে রাজবাড়ীতে থেমে থাকা বাসে কুষ্টিয়াগামী এসবি পরিবহনের ধাক্কা, আহত ১৫ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা: শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায় ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দুটি দুর্নীতির মামলা সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরও সাড়ে তিন মাস বাড়লো আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল হলে পুনরায় চালু হবে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃদেশীয় ট্রেন ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’: পদ্মার চরে চার জেলায় ১,৫০০ পুলিশ সদস্যের বিশেষ অভিযান পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানির সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের কুষ্টিয়ায় আবারও ডিসি পরিবর্তন/ ইকবাল হোসেন আসছেন নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে

জেনুইন লিফ কোম্পানির মালিক লিটন এমপি আনারের গাড়ি কুষ্টিয়ায় আনেন, চট্রগ্রামে রয়েছে তার প্রচুর অপকর্ম

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
জাতীয় সংসদের সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার-এর বিলাসবহুল প্রাডো গাড়িটি কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসেন প্রকৃত লিফ কোম্পানির কথিত মালিক আবদুস সবুর লিটন। কোম্পানিটির অফিস রয়েছে কুষ্টিয়া শহর এবং ভেড়ামারা উপজেলায়। গাড়িটি রাখা হয়েছিল কুষ্টিয়া শহরের সাফিনা টাওয়ারে, যা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ঠিক উল্টো পাশে অবস্থিত।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, প্রকৃত লিফ কোম্পানি ভেড়ামারায় একটি তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা নির্মাণ করছে, যা কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। কোম্পানিটি কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে তামাক ক্রয় করে এবং তা ঢাকাসহ চট্টগ্রামে সরবরাহ করে।
এই কোম্পানির মালিক আবদুস সবুর লিটনের বাড়ি চট্টগ্রামে। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার নরসিংদীতে “তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো” নামে একটি ব্যবসা পরিচালনা করেন।
সূত্র মতে, লিটন “বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো” নামে আরেকটি ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন, যেটিতে তার অংশীদার ছিলেন সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় তারা ও বিজয় টোব্যাকো’র নামে তামাক ক্রয় করতেন লিটন।
গত ৫ আগস্ট কোনো এক গোলযোগের পর কয়েকদিন তামাক কেনাবেচা বন্ধ ছিল। পরে দৌলতপুর উপজেলার দুইজন বিএনপি নেতার আশীর্বাদে লিটন আবার ভেড়ামারা ও দৌলতপুরে ব্যবসা শুরু করেন।
অনুমান করা হচ্ছে, এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের মৃত্যুর পর গাড়িটি আওয়ামী লীগের এক নেতার হেফাজতে ছিল, যিনি লিটনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সেই গাড়িটিই লিটন কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসেন।
সাফিনা টাওয়ারের অফিসটি পরিচালনা করেন জাহিদ হোসেন, যিনি লিটনের অধীনে সিইও হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া বেলাল হোসেন নামের একজন ব্যক্তি জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্থানীয়দের ধারণা, গাড়িটি তাদের হেফাজতেই ছিল।
তথ্য জানার জন্য সাফিনা টাওয়ারের মালিক শামসুল ইসলাম, সিইও জাহিদ এবং জিএম বেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউই সাড়া দেননি। অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, শুধু কেয়ারটেকার ও নিরাপত্তা প্রহরী উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন জানান, বিষয়টি বিস্তারিত তদন্তাধীন।
তিনি বলেন, “বর্তমানে ছুটির কারণে অফিস বন্ধ রয়েছে। ছুটি শেষে বিআরটিএ থেকে গাড়িটির বিষয়ে তথ্য চাওয়া হবে। তখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে গাড়িটি আনার সাহেবের ছিল কি না।”
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে, কুষ্টিয়া পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, পুলিশ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত করছে।
তিনি জানান, এমপি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নিযুক্ত উচ্চ পর্যায়ের টিমগুলোকেও এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে এবং বর্তমানে ভবন মালিকের হেফাজতে রয়েছে।
এদিকে, আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস দাবি করেছেন, গাড়িটি তার বাবারই ছিল এবং তিনি নিজেও সেটি নিয়মিত ব্যবহার করতেন।
তিনি বলেন, তার বাবার হত্যার পর তারা পরিবারসহ গাড়িটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোথাও তথ্য পাননি।
মুমতারিন জানান, তারা গাড়িটি ফেরত চান এবং প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নেবেন।
পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত নথিপত্রে দেখা গেছে, গাড়িটির মালিক হিসেবে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের নামই উল্লেখ রয়েছে—এটি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে, তদন্তের স্বার্থে এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না বা কেউ অভিযুক্ত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলতে রাজি হয়নি।
আবদুস সবুর লিটন ও তার অপকর্ম/
আবদুস সবুর লিটন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র। তিনি ভুয়া ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে নকল সিগারেট উৎপাদন ও সারা দেশে তা সরবরাহের অভিযোগে অভিযুক্ত।
লিটন তার এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করেছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে।
সূত্র জানায়, বিজয় ইন্টারন্যাশনাল ও তারা ইন্টারন্যাশনাল নামক দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সরকারকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি করেছে।
বিজয় ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো কোম্পানি কর্তৃক ভুয়া ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে নকল সিগারেট উৎপাদনের ঘটনাটি এখনো একাধিক সংস্থা তদন্ত করে যাচ্ছে
সূত্র মতে, লিটনের মালিকানাধীন বিজয় ও তারা টোব্যাকো কোম্পানিই দেশের মধ্যে নকল সিগারেট উৎপাদন ও সরবরাহে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
তদন্তে জানা গেছে, এই দুই কোম্পানির মধ্যে একটির ৪০ শতাংশ মালিকানা সাবেক মন্ত্রী নওফেলের। কোম্পানিগুলো কক্সবাজারের চকরিয়া ও কিশোরগঞ্জের শিবপুরে অবস্থিত কারখানাগুলোতে সিগারেট তৈরির কাঁচামাল এনে নকল সিগারেট উৎপাদন করত। পরে বিদেশি ব্র্যান্ডের নামে নকল সিগারেট সারা দেশে সরবরাহ করা হতো।
এছাড়া, লিটনের নেতৃত্বাধীন চক্রটি বাজার থেকে নামী তামাক কোম্পানির ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল সংগ্রহ করে তা পুনঃব্যবহার করে নকল সিগারেট তৈরি করত বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিজয় ও তারা ইন্টারন্যাশনালের কারখানায় একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও প্রতিষ্ঠান দুটি কোনো বড় ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হয়নি।
২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর যৌথ অভিযানে তারা ইন্টারন্যাশনালের কারখানা থেকে ৫৩ হাজার অবৈধ রাজস্ব স্ট্যাম্প এবং ১৩ লক্ষাধিক সিগারেট জব্দ করা হয়, এবং প্রতিষ্ঠানটিকে মাত্র ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে, মে মাসে কাস্টমস গোয়েন্দারা এই কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে আরও নকল সিগারেট জব্দ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net