June 20, 2025, 2:24 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
নানা সমস্যা-সীমাবদ্ধতা সত্বেও সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশনে অর্থ বছরের গত ১০ মাসে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। দীর্ঘদিনের দাবির পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সব ধরনের পণ্য আমদানি রপ্তানির অনুমতির পর রাজস্ব আয়ে এই গতি সনচারিত হয়েছে বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও সম্প্রসারণে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বন্দরে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে ১০৩ কোটি টাকার ওপরে।
বন্দরের শুল্ক স্টেশনে রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৯৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী প্রথম ১০ মাসের অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ সময় রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৮৮৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে ৮৬ কোটি ৭০ লাখ, আগস্টে ৯৩ কোটি ২০ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৮৯ কোটি ৮৮ লাখ, অক্টোবরে ১২৭ কোটি ৮০ লাখ, নভেম্বরে ১২২ কোটি ৮১ লাখ, ডিসেম্বরে ৮৪ কোটি ৪৭ লাখ, জানুয়ারিতে ৭৫ কোটি ২৮ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ৭২ কোটি ১০ লাখ, মার্চে ৭৯ কোটি ৭৫ লাখ এবং সবশেষ এপ্রিলে ৫৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা আহরণ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে ৯০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভোমরা শুল্ক স্টেশন দিয়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৭৮৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা আহরণ হয়। এ হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে ১০৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
নানা অভিমত বন্দর ব্যবসায়ীদের/
১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল ১৬টি পণ্য আমদানির অনুমতি নিয়ে এলসি স্টেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করে ভোমরা স্থলবন্দর। ২০১৩ সালে ওয়্যার হাউজ নির্মাণের পর ভোমরাকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। ভারতের কলকাতার সঙ্গে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব দেশের যেকোনো বন্দরের চেয়ে কম হওয়ায় বেড়েছে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ।
ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানী ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন এমন নানা ধরনের ব্যক্তিবর্গ বন্দরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
সব ধরনের পণ্য আমদানি করতে পারলে রাজস্ব আহরণ কয়েক গুণ বেশি হতো বলে দাবি করেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুছা।
তিনি ডেইলি সানকে বলেন, ‘দেশের অন্য সব বন্দরের তুলনায় ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহারকারীরা চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কারণ এ বন্দর দিয়ে গুঁড়ো দুধ ব্যতীত সব ধরনের বৈধ পণ্য আমদানির অনুমতি থাকার পরও এখানকার ব্যবসায়ীরা নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের পণ্য আনতে পারছেন না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বন্দর দিয়ে ৭২টি পণ্য আমদানির অনুমোদন থাকলেও পর্যাপ্ত শেড ও কিপিং লাইসেন্স না থাকায় আমদানি হতো মাত্র ২২টি পণ্য। গত বছর এনবিআর নতুন করে সকল পণ্য আমদানির অনুমতিতে স্বস্তি ফিরেছে আমদানিকারকদের মাঝে।
ব্যবসায়ী দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, ভোমরা বন্দরের রাজস্ব বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ আমদানি অনেক বেড়েছে। এখন সব ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া পার্কিং ইয়ার্ড চালু হওয়ায় যানজট কমেছে, ফলে ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করতে পারছেন।
তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও সম্প্রসারণে অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল গফুর।
তিনি বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর, কারণ ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব অন্যান্য বন্দরের তুলনায় কম। তবে অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বন্দরের পূর্ণ সম্ভাবনা এখনো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ওয়্যারহাউস থাকলেও চালু হয়নি, পণ্য খালাসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধান করা গেলে রাজস্ব আহরণ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ভোমরা স্থলবন্দরের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এ বিষয়ে ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক রুহুল আমিন বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরকে একটি পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউস হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত বছর ২৯ আগস্ট এনবিআর থেকে সব পণ্য আমদানির অনুমোদন পাওয়ার পর বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ ও বালু ভরাট সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৫৭ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এসব জায়গায় উন্নতমানের ওয়্যারহাউস, আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল, পার্কিং ইয়ার্ড ও ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। ফলে আমদানি-রপ্তানি ও রাজস্ব আয় আরও বৃদ্ধি পাবে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমস ডেপুটি কমিশনার মো. শওকত হোসেন বলেন, রাজস্ব আহরণের বিষয়টি মূলত পণ্য আমদানির নির্ভর। আমদানি-রফতানিতে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
Leave a Reply