March 14, 2025, 6:51 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
মোট ১ হাজার ১৫৬টি নদ-নদীর খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে এ তালিকা। প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ১৪ এপ্রিল। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ তালিকা থেকে বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের তালিকাভুক্ত নদ-নদী বাদ পড়েছে ২০০টি। আর ওই তালিকার বাইরে থেকে নদীর নাম নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১৪৮টি। এমনকি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তালিকার ১৮টি নদ-নদীর নামও এ তালিকায় যুক্ত হয়নি।
বাংলাদেশে সরকারি সংস্থাগুলোর নদ-নদীর তালিকাভুক্তির পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, সরজমিনে পরিদর্শন এবং তালিকাভুক্তিতে গ্রহণযোগ্য ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণের পরিবর্তে মূলত টেবিলওয়ার্কের ভিত্তিতে এসব তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এমনকি সরকারি সংস্থাগুলোরও একটির অন্যটির তালিকার ওপর তেমন একটা আস্থা দেখা যায় না।
এর আগে ২০২৩ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ১ হাজার ৮টি নদীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। তালিকাটি এতই বিতর্কিত হয় যে খোদ নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় তা আমলে নেয়নি। অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপর দেশে নতুন করে নদ-নদীর সংখ্যা নির্ণয়ের কাজ শুরু হয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এর আগের নদীর তালিকা করেছে সরকার। কিন্তু সে তালিকা ছিল চরম বিতর্কিত। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সর্বশেষ তালিকাটিও করা হয়েছে জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে।
অভিযোগ রয়েছে, জেলা প্রশাসনগুলো থেকে পাঠানো তালিকায় অনেক নদীর নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এমন অনেক নদী আছে যেগুলো নদীর চেয়ে ছোট, খালের চেয়ে বড়। এগুলোকে আঞ্চলিক ভাষায় খাড়ি বলা হয়। এগুলো যেহেতু প্রবহমান থাকে তাই এগুলো নদীর তালিকায় রাখতে হবে। কিন্তু প্রশাসন সেটা রাখতে চায়নি। একইভাবে কিছু নদী আছে বছরের বেশির ভাগ সময় প্রবাহ বন্ধ থাকে। সে নদীগুলো তালিকায় রাখতে ইচ্ছুক না জেলা প্রশাসনসংশ্লিষ্টরা।
পাউবোর পক্ষ থেকে ২০১১ সালে বাংলাদেশের নদ-নদী শীর্ষক ছয় খণ্ডের একটি বই প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতাসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য তথ্য যুক্ত করে ৪০৫টি নদ-নদীর বর্ণনা দেয়া হয়। ওই ৪০৫টির অন্তর্ভুক্ত ১৮ নদীর নামও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদ-নদীর সংখ্যা নির্ধারণে এবারো বিতর্কিত পদ্ধতিই অনুসরণ করছে সরকার। নদ-নদীর ক্ষেত্রে সরজমিন পরিদর্শন গুরুত্বপূর্ণ হলেও টেবিল ওয়ার্কের মাধ্যমেই চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
টেবিল ওয়ার্কের মাধ্যমে নদ-নদীর সংখ্যা নির্ধারণের পদ্ধতি সঠিক নয় বলে মনে করেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এর আগেও সরকারিভাবে একটি নদ-নদীর তালিকা করা হয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বিতর্কিত ১ হাজার ৮টি নদ-নদীর তালিকাও জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতেই করা হয়েছিল।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান জানান, জেলা প্রশসাকদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে ১ হাজার ১৫৬টি নদীর নাম খসড়া আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। যারা নদ-নদী নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা।’
তিনি বলেন, ‘এপ্রিলের ১৪ তারিখ নদ-নদীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে জনসাধারণের মতামত নেয়ার জন্য ওয়েবসাইটে নদীর তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেখানে যে মতামত আসবে তা যাচাই-বাছাই করে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর পরও ভুল হতে পারে। কোনো কোনো নদীর নাম বাদ যেতে পারে। পরে নদীর নাম অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ থাকবে।’
Leave a Reply