November 14, 2025, 2:14 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একই দিনে অবরোধ/সাড়ে চার ঘণ্টা পর স্বাভাবিক যান চলাচল ঢাকা–খুলনা মহাসড়কে রাজবাড়ীতে থেমে থাকা বাসে কুষ্টিয়াগামী এসবি পরিবহনের ধাক্কা, আহত ১৫ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা: শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায় ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দুটি দুর্নীতির মামলা সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরও সাড়ে তিন মাস বাড়লো আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল হলে পুনরায় চালু হবে ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃদেশীয় ট্রেন ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’: পদ্মার চরে চার জেলায় ১,৫০০ পুলিশ সদস্যের বিশেষ অভিযান পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানির সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের কুষ্টিয়ায় আবারও ডিসি পরিবর্তন/ ইকবাল হোসেন আসছেন নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে

যশোর শিক্ষা বোর্ডের অনলাইন প্রশ্নব্যাংক বন্ধ, শিক্ষক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

শুভব্রত আমান/

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর তাদের অনলাইন প্রশ্নব্যাংকের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

৮ মে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মতিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই স্থগিতাদেশের ঘোষণা আসে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এখন থেকে পাবলিক পরীক্ষার ব্যতীত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে। অন্য কোনো উৎস থেকে সংগৃহীত প্রশ্নপত্রে কোনোভাবেই পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।

শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে যশোর বোর্ড বিদ্যালয় পর্যায়ে পরীক্ষার মানোন্নয়নের জন্য নিজস্ব প্রশ্নব্যাংক তৈরি করে একটি শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ করে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বাছাইকৃত দক্ষ শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি ও মডারেশন করেন। পরবর্তীতে এই প্রশ্নপত্রগুলো ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হতো।
এই প্রক্রিয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত প্রশ্নের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে এবং বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। গত কয়েক বছর ধরে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষাগুলো এই প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমেই নেওয়া হচ্ছিল।

মিশ্র প্রতিক্রিয়া
দেশে প্রথমবারের মতো এমন একটি উদ্ভাবনী ব্যবস্থা চালু করে যশোর বোর্ড এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। এই ব্যবস্থার স্থগিতাদেশ শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে—কারো মত সমর্থনে, আবার কারো মত বিরোধিতায়।

সমর্থকদের মতে, প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে মানসম্মত এবং পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক প্রশ্নপত্র তৈরি হতো, ফলে গাইড বইয়ের উপর নির্ভরতা অনেক কমে আসে। তাছাড়া একক প্রশ্নের ভিত্তিতে নেওয়া প্রাক-নির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য যশোর বোর্ড এসএসসিতে জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করে।

যশোর সদরের আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ মাসুদ বলেন, ‘‘১০ জেলার সেরা শিক্ষকদের নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হতো, ফলে প্রশ্নের মান ছিল খুবই ভালো। এমনকি দূর-দূরান্তের গ্রামের শিক্ষার্থীরাও ক্যাডেট বা জেলা স্কুলের সমমানের শিক্ষকের প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে পারতো, যার ফলে তাদের মানোন্নয়ন হতো।’’
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরে দক্ষ হয়ে উঠেছিল। বোর্ড পরীক্ষার কিছু সময় আগে অনলাইনে প্রশ্ন সরবরাহ করায় ফাঁসের ঝুঁকিও কমে গিয়েছিল। এটি ছিল একটি সফল উদ্যোগ। প্রশ্ন সরাসরি পাঠ্যবই থেকে হওয়ায় গাইড বইয়ের উপর নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছিল।”

একই সুরে কথা বলেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রামনাথপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, “গ্রামের অনেক স্কুলে প্রশ্নপত্র তৈরির ও বিতরণের জন্য পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা নেই। আমরা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে প্রশ্ন ডাউনলোড করে সরাসরি পরীক্ষা শুরুর আগে বিতরণ করতাম। এতে প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাবনা একদমই ছিল না।”

এদিকে, যশোর জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিএম জহুরুল পারভেজ প্রশ্নব্যাংক সংক্রান্ত নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বোর্ড শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছে, কিন্তু সেই অর্থের কোনো হিসাব নেই। বোর্ডের কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির সীমা নেই।”

সূত্র জানায়, প্রতিটি শিক্ষার্থী থেকে ১০ টাকা করে নেওয়া হতো, এবং যশোর বোর্ডের আওতায় আনুমানিক ২২ হাজার থেকে ২৪ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। অর্থ আদায়ের পর এ সংক্রান্ত কোনো আর্থিক স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতা ছিল না।

তবে বিএম জহুরুল পারভেজ বলেন, “এখন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেরাই প্রশ্ন তৈরি করবেন। এ কারণে শিক্ষকরা বাধ্য হবেন বই পড়তে, যার মাধ্যমে প্রশ্নের মানোন্নয়ন হবে।”
তিনি বলেন, “পদ্ধতির হঠাৎ এই পরিবর্তন কিছুটা সমস্যা তৈরি করলেও সময়ের সাথে সাথে এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. আব্দুল মতিন বলেন, “আমরা শুধু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি। এটি সত্যিই একটি সৃজনশীল ও নান্দনিক উদ্যোগ ছিল।”
তিনি বলেন, “সেরা শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করতেন, ফলে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরাও মানসম্পন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেতো। এতে ছাত্র, শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান সবাই উপকৃত হয়েছে। কিন্তু এখন প্রশ্নব্যাংক বন্ধ হওয়ায় লাভবান হবে গাইড বই বিক্রেতারা।”

অর্থ আত্মসাৎ সম্পর্কিত অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি এখানে নতুন। শুনেছি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে নেওয়া হতো, তবে অভিযোগ ওঠার পর সেই পদ্ধতি ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net