June 24, 2025, 4:00 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
খামেনির সহায়তা চাওয়ার উত্তরে পুতিন : ইরানের জনগণকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রাশিয়া যশোর বোর্ড/ এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া, জানালো কর্ক্ষৃপক্ষ ‘মব’ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা- বিবৃতি সরকারের, সাবেক সিইসি ডিবি হেফাজতে শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে বিএনপির মামলা জেলা কমিটি শীঘ্রই/কুষ্টিয়ার ৪ উপজেলায় এনসিপির নতুন সমন্বয় কমিটি থাকবে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ/একটি ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্ম গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান বেনাপোল বন্দরে জলাবদ্ধতায় স্থবির বাণিজ্য কার্যক্রম ইসরায়েলি হাসপাতালে বোমা হামলা শিরোনাম হয়, ইরানে হলে তা হয় না কেন? ভোমরা শুল্ক স্টেশন/১০ মাসে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে শতকোটি টাকা ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মৃত্যুর ১০ মাস পর হত্যা মামলা, কারাগারে বেরোবি শিক্ষক, সমালোচনার ঝড়

চাকরিচ্যুতির ক্ষোভ থেকেই ইউএনও ওয়াহিদার উপর হামলা মালি রবিউলের !

দৈনিক কুষ্টিয়া ডেস্ক/
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখের ওপর হামলার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। ওই হামলার ঘটনায় একমাত্র জড়িত ব্যক্তি হচ্ছে ইউএনও’র বাসার সাবেক কর্মচারী ও চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত মালি রবিউল ইসলাম। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য স্বীকার করেছে সে। তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর কেউ জড়িত নয় এমন স্বীকারোক্তিও দিয়েছে সে। মূলত তাকে চাকরিচ্যুত করার ক্ষোভ থেকেই পরিকল্পনা করে ইউএনওর ওপর হামলা করে বলেও জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছে রবিউল ইসলাম।
হামলার ওই রাতে ইউএনওর বাড়ি থেকে বেশ মোটা অংকের টাকাও লুটপাট করেছে সে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রবিউলের এসব কথার সত্যতাও পেয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি তার দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা পুলিশও একমত ঘটনার সঙ্গে সে জড়িত এবং তার সঙ্গে আর কেউ জড়িত নয়।
এই মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব কথা বলেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, ‘অভিযুক্ত রবিউলের কথার সাথে সিসিটিভির ফুটেজ, প্রযুক্তির ব্যবহার ও আলামত উদ্ধারের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। রবিউলের দেওয়া তথ্যমতে আলমারির চাবি, হাতুড়িসহ বেশকিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।’
রবিউল ইসলাম জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে সে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ঘোড়াঘাটে বদলি হয় মালির পদে। পরে সেখানে কাজ করার সময়ই টাকা চুরি করে এবং সেই অপরাধে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় ও বিভাগীয় মামলা করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রবিউলের দেওয়া ব্যাখ্যা অনুযায়ী, প্রায় ৪ মাস আগে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ১৬ হাজার টাকা চুরি করে সে। পরে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হিসেবে নেওয়া হয়। ওই সময়ে রবিউল ইউএনওকে অনুরোধ করেছিল যে তাকে যেন কোনও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা না হয়। কিন্তু পরে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করায় তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এই ক্ষোভ বৃদ্ধি পায় যখন তার সংসারে অভাব দেখা দেয়। চাকরিরত অবস্থায় সে ১৭ হাজার টাকা বেতন পেত, কিন্তু চাকরি থেকে বহিষ্কারের পর সে বেতন পেতে শুরু করে মাত্র ৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে গত এক মাস আগে সে ইউএনওর বাড়িতে গিয়ে তার অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে আসে। কিন্তু এরপরেও তাকে ক্ষমা না করায় ক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তাই এমন হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে রবিউল ইসলাম।
পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয় রবিউল। জেলা শহরে এসে একটি বাসে করে রওনা দেয় ঘোড়াঘাটের উদ্দেশ্যে। সে যখন ঘোড়াঘাটে পৌঁছে তখন রাত প্রায় ১০টা। বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে রাত ১টা ১৮ মিনিটে ইউএনও’র বাড়িতে পাচিল টপকে প্রবেশ করে রবিউল। এরপর সে চেয়ার নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। পরে ব্যর্থ হয়ে কবুতরের ঘর থেকে মই নিয়ে আসে। মূলত এই মইটি রবিউল ইসলাম যখন চাকরি করতো তখন নিজেই তৈরি করেছিল। এই মই দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কারণে আবার সে মই রেখে আসে। তখন সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাড়িতে চলে আসার। কিন্তু, কিছুক্ষণ পরে আবারও সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে ইউএনও’র ঘরের ভেতরে প্রবেশ করবে। রাত সাড়ে ৩ টার দিকে রবিউল মই বেয়ে বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ইউএনও’র বাথরুমে প্রবেশ করে। কিন্তু, বাথরুমের দরজা বাইরে থেকে আটকানো থাকায় সে তখনই ইউএনওর বেডরুমে প্রবেশ করতে পারে না। প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সে বাথরুমের সিটকিনি খুলে বেডরুমে প্রবেশ করে। এ সময় ইউএনও শব্দ পেয়ে জেগে যান। তখন তার মাথাসহ শরীরে পেছন থেকে হাতুড়ি দিয়ে পরপর কয়েকটি আঘাত করে রবিউল। এই হাতুড়িটি সাথে করেই নিয়ে এসেছিল সে।
হাতুড়ির আঘাতে ইউএনও চিৎকার দিয়ে বিছানায় ঢলে পড়েন। তার চিৎকারে পাশের রুম থেকে বাবা ওমর আলী শেখ এগিয়ে আসলে তাকে ধাক্কা দেয় রবিউল। এ সময় তিনি মেঝেতে পড়ে যান। এ সময় রবিউল তাকেও আঘাত করেন এবং আলমারির চাবি চান। তিনি চাবি দেখিয়ে দিলে সেই চাবি দিয়ে আলমারি খোলার চেষ্টা করে সে। এ সময় সেখান থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রায় সাড়ে ৪টার দিকে সে আবারও বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে নিচে নেমে আসে। এরপর সে পূর্বের স্থানে মই রেখে প্রাচীর টপকিয়ে রাস্তায় চলে আসে। ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী কোচে উঠে সে দিনাজপুরে চলে আসে। এরপর বাড়িতে গোসল ও নাস্তা সেরে আবারও শহরে ডিসি অফিসে চলে যায়। পরদিন যখন ইউএনও’র খবরে হুলুস্থূল পড়ে যায় সারাদেশে তখন দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অফিসেই দিনভর ছিল রবিউল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল পুলিশকে জানিয়েছে, ইউএনও’র বাড়ি থেকে যে টাকা সে নিয়ে এসেছিল তার মধ্যে কিছু টাকা এলাকার একজনকে দিয়েছিল। যাকে দেওয়া হয়েছিল সে জুয়াড়ি। ওই ব্যক্তিও টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তবে ওই লোককে জুয়ার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
ইউএনওর বাড়িতে প্রবেশ করে এসব কার্যক্রম চালালেও ওই সময়ে প্রহরী নাদিম হোসেন পলাশ ঘুমিয়ে ছিলেন বলেও জানিয়েছে রবিউল। পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিউল একটি ব্যাগে করে জামা-প্যান্ট ও হাতুড়ি নিয়েই ভেতরে প্রবেশ করেছিল। সে জানতো বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। তাই তাকে যাতে কেউ চিনতে না পারে এবং সিসি ক্যামেরায় যাতে তার চেহারা না চেনা যায় সেজন্য সে মাস্ক ও টুপি পড়েছিল।
সে রাতে সিসিটিভি ফুটেজে দুজন ব্যক্তিকে ওই বাসায় প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল এমন কথা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওই কর্মকর্তা বলেন, ইউএনও’র বাসায় বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। এগুলোর একেকটার অবস্থান, রেজ্যুলেশন ও সেখানে আলো পড়ার ধরনে ভিন্নতার কারণে একই ব্যক্তিকে ভিন্ন রঙের পোশাক পরিহিত মনে হওয়ায় একাধিক ব্যক্তি হামলায় অংশ নিয়েছে বলে বলা হয়েছিল। পরে গোয়েন্দা বিশ্লেষণে হামলাটিতে একজন ব্যক্তিই অংশ নেয় এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। রবিউল ইসলাম জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া ধামাহার ভিমরুলপাড়া গ্রামের খতিব উদ্দীনের ছেলে। গত বুধবার রাত ১টা ১০ মিনিটে তাকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। রবিউল ইসলামরা ৭ ভাই ও এক বোন। তার তিন ভাই দিনাজপুর পৌরসভায়, এক ভাই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মচারী পদে চাকরি করেন। বাকি দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই পানের দোকানদার ও অপর ভাই কৃষিকাজ করেন। তার বাবা স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তার বাবা মারা যান। রবিউল বিবাহিত।
বর্তমানে আদালত কর্তৃক ৬ দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ পেয়ে রবিউলকে নিজ হেফাজতে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।
সুত্র, বাংলা ট্রিবিউন

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net