November 22, 2024, 1:41 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া ডেস্ক/
আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর এক টুইট বার্তায় বাইডেন বলেছেন, আমি সবার প্রেসিডেন্ট হবো’। কেউ ভোট দিক বা না দিক। একইসাথে বাইডেন দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
নিজ টুইট বার্তায় বাইডেন লেখেন আমেরিকা, আমি সম্মানিত যে আপনারা আমাকে এই মহান দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাছাই করেছেন। আগামীতে আমাদের কাজ অনেক কঠিন তবে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আপনারা আমার জন্য ভোট করেছেন কি করেননি আমি সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হবো। আপনারা আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন আমি তার সম্মান দেব।
বাইডেন জয় পেয়ে গেলেও এখনো ভোট গণনা চলছে। তিনি জর্জিয়া ও নেভাডায় এগিয়ে আছেন। এই দুই রাজ্যে জিতলে ৩০৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাবেন বাইডেন। ৫৩৮টি ইলেকটোরালের মধ্যে তার দরকার ছিল ২৭০টি। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলিনা ও আলাস্কায় এগিয়ে। সেখানে জিতলে ২৩২ আসন পাবেন তিনি।
এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে থেকে যাবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এত ভোট পড়েনি। এত টানটান উত্তেজনাও সম্ভবত ছিল না।
অনেক আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারতেন জো বাইডেন। কিন্তু অন্যের লেখা চুরির অভিযোগ তাকে পিছিয়ে দিয়েছে। তার ৭৭ বছরের জীবন পুরোটাই সংগ্রামের।
সুদীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তাঁর। হোয়াইট হাউসে যাবার স্বপ্ন বহুদিনের।
১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চেয়েচিলেন। মাঠেও নামলেন। ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, তিনি অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়েছেন।
এই অভিযোগের সূত্র ধরে আরেকটা অভিযোগ সামনে আনা হয়, ছাত্র জীবনের একটি ঘটনা। তখন তিনি আইনের ছাত্র হিসাবে তার সাইটেশন পেপারে আরেকজনের লেখা হুবহু ব্যবহার করেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, সেটা যে নিয়ম বহির্ভূত তা তিনি জানতেন না। এমন অসততার অভিযোগ আনা হলে তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
পরে তাঁর এক জীবনীকারকে মি. বাইডেন বলেছিলেন, “ওই ঘটনা আমাকে কুরে কুরে খেয়েছে। নিজেকে আমি চিরকাল একজন সৎ মানুষ হিসাবে মনে করেছি। সেই জায়গাটায় বিরাট একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম।”
আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন, “এর জন্য দায়ী আমি নিজে। নিজের ওপর রাগ আর হতাশায় ভুগছি। আমেরিকার মানুষকে আমি কীভাবে বোঝাবো যে এটাই জো বাইডেনের আসল পরিচয় নয়। ওটা শুধু মস্ত একটা ভুল ছিল!”
এরপর দুর্ঘটনায় স্বজন হারানো, স্ত্রী-পুত্রবিয়োগ, নিজের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ সহ নানা সংকটে আর ২০ বছর নিজের সঙ্গে সংগ্রাম করেন বাইডেন। এর মাঝে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন তাঁর চেয়ে বয়সে কনিষ্ঠ অনেকেই, যেমন- বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প!
২০০৮ সালে আবারও প্রেসিডেন্ট হতে চাইলেন। দলীয় মনোনয়নের দৌঁড়ে নামলেন। তবে বারাক ওবামার সঙ্গে পেরে উঠেননি। যদিও ওবামার পরে তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করে নেন। ২০১৬ সালেও চেষ্টা করেন। দলীয় মনোনয়ন পাননি, হিলারির কাছে হেরে যান। তখন প্রেসিডেন্ট হন রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কিন্তু হাল ছাড়েননি জো বাইডেন। অবশেষে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন লাভ করলেন। সেখানেও অনিশ্চয়তা ছিলো। পেতে পেতেই যেন হেরে যাচ্ছিলেন। শেষ মুহুর্তে এসে মনোনয়ন পান। এবার সে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন।
জো বাইডেন প্রায়ই বলেন, “বাবার একটা কথা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। কে তোমাকে কতবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল, সেটা বড় কথা নয়, কত দ্রুত তুমি উঠে দাঁড়াতে পারলে, মানুষ হিসাবে সেটাই হবে তোমার সাফল্যের পরিচয়।”
Leave a Reply