September 15, 2025, 10:59 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
ভাঙ্গায় উত্তেজনা/ সংসদীয় সীমানা পুনর্বিন্যাসে সহিংসতা, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ আইপি ক্যামেরা খুলে ফেলে কুষ্টিয়ায় মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর ফরিদা পারভিন/বাউল গানের মহা স্রোতধারায় যিনি ছিলেন এক জীবন্ত লালন ফরিদা পারভীনকে কুষ্টিয়ায় দাফনের বিরোধীতায় স্বামী হাকিম, দাফনের দাবি লালন মাজার প্রাঙ্গণেও বাগেরহাটে চার আসন বহালের দাবিতে অফিস-আদালত অবরুদ্ধ সাতক্ষীরা সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১০ বাংলাদেশি হস্তান্তর টিসিবির পণ্য বিতরণে বিশৃঙ্খলা/১০ মাসেও ঝুলে আছে ৮১ শতাংশের বেশি ফ্যামিলি কার্ড ডাকসু নির্বাচন: বিএনপির জন্য আত্মবিশ্লেষণের বার্তা ফরিদা পারভীন লাইফ সাপোর্টে ডাকসুর আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা/ ভিপি সাদিক কায়েম, জিএস ফরহাদ

শেখ মুজিবের বাড়ি, সুধাসদনসহ সারাদেশে আওয়ামী নেতাদের বাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
ক্রেন, এক্সকাভেটর, বুলডোজার দিয়ে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি। বাড়িচি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। শুধু ধানমন্ডির বাড়ি নয়, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধাসদনে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ভোলা ও পিরোজপুরে শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য-ম্যুরাল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামফলক।
৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচার নিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। সেই উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে অভ্যূত্থান বিজয়ী ছাত্র-জনতা বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে (বঙ্গবন্ধু জাদুঘর) ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে করা হয় অগ্নিসংযোগ।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে বুধবার রাত ৮টার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জড়ো হন। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ছাত্র-জনতার ভিড়। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতা গেট ভেঙে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের তিন তলাবিশিষ্ট বাড়িটির ভেতরে ঢুকে শুরু করে ভাঙচুর। কেউ কেউ লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে ভাঙচুরে অংশ নেন। কেউ কেউ আবার জানালার গ্রিল, কাঠের ফ্রেম ও ফটকের অংশবিশেষ ভেঙে নিয়ে যান।
এ সময় পুরো এলাকা বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত থাকে। ‘দিল্লি না ঢাকা, আবু সাঈদ-মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই কর’- ইত্যাদি স্লোগান শোনা যায়।
ভেতরে যখন ভাঙচুর চলছে তখন ভবনটির বাইরে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। তাদের কেউ কেউ বাড়ির সামনের পরিস্থিতি দেখছিলেন, অনেকে মোবাইলে ছবি বা ভিডিও ধারণ করে রাখছিলেন।
রাত ১১টার দিকে একটি ক্রেন ও একটি এক্সকাভেটর ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়। শুরু হয় বাড়ি ভাঙার কাজ। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বাড়িটির একপাশ ভাঙা শেষ হয়। রাত ১টার দিকে আনা হয় আরও দুটি বুলডোজার। সেগুলো দিয়ে বাড়িটির পাশে অবস্থিত দুটি স্থাপনা ভাঙা হয়। একদিকে চলে ভবন ভাঙার কাজ, অন্যদিকে ভবনটির উল্টোপাশে খোলা জায়গায় প্রজেক্টরে দেখানো হচ্ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের প্রামাণ্যচিত্র। সেখান থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলা হচ্ছিল, ‘যাদের ভবন ভাঙার ইচ্ছা আছে, তারা সামনে গিয়ে ভেঙে আসেন। আর এখানে যারা প্রামাণ্যচিত্র দেখতে চান, তাদের সুযোগ করে দেন।’
এ সময় ৩২ নম্বর সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। মধ্যরাতে সেখানে উপস্থিত হন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তবে, তারাও একসময় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
সকাল পর্যন্ত চলে ভবন ভাঙার কাজ।
৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙা ছাড়াও বুধবার রাতে ধানমন্ডির ৫ নম্বরে অবস্থিত শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনে আগুন দেওয়া হয়। রাত ১টা পর্যন্ত সেখানে আগুন জ্বলছিল।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হয় বুধবার। এর মধ্যে হঠাৎ আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়, বুধবার রাত ৯টায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। যিনি ৫ অগাস্টের পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন।
বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’ তার আগে বুধবার বিকেলে আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন।
একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে দুই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর উল্লেখ করেন, ‘হাজারও ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আজ (বুধবার) রাত ৯টায় এই কর্মসূচি পালিত হবে।’
স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের জন্ম; পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের করুণ পরিণতির পর ২০২৪ সালে ৬৩ বছর বয়সী বাড়িটি ঘিরে জন্ম নেয় নতুন এক ইতিহাস। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্র ধরে ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ঘটে যায় ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান। ওইদিন ৩২ নম্বরের এই বাড়িতে দেওয়া হয় আগুন।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ভবনটিতে যখন ভাঙচুর চলছিল ঠিক তখন আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডির ৫-এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১০টা থেকে পৌনে ১১টার মধ্যে কয়েকজন তরুণ এসে তালাবন্ধ সুধাসদনে আগুন লাগিয়ে দেয়। যদিও ৫ অগাস্ট সুধাসদনে এক দফা হামলা হয়। এরপর সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে তালা মেরে যান। বুধবার রাতে সেই তালা ভেঙে আগুন লাগানো হয়।
কয়েক ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বললেও দমকল বাহিনীকে সেখানে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। স্থানীয়রা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা এই বাড়িতে কিছুদিন অবস্থান নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন এখান থেকেই করেন তিনি। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয় বাসভবনে অবস্থান নেন।
গণভবনে অবস্থানকালে এই বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসতেন শেখ হাসিনা। তার পুরো আমল জুড়ে বাড়িটির নিরাপত্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন থাকত।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net