February 23, 2025, 5:31 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
সুন্দরবনে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বনদস্যুরা। এরই মধ্যে চাঁদার দাবিতে কয়েক দফায় বনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বনদস্যুরা গত এক মাসে অপহরণ করে অর্ধশতাধিক জেলেকে। মুক্তিপণ নিয়ে কিছু জেলে ছাড়া পেলেও এখনো অনেক জেলে জিম্মি রয়েছে দস্যুদের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে পেশা বদলাচ্ছেন বনজীবীরা। এর ফলে বন বিভাগের রাজস্ব আদায় কমেছে অর্ধেকের নিচে। অথচ সরকারিভাবে দস্যুমুক্ত এ সুন্দরবন।
একসময় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ছিল অপহরণ, ডাকাতিসহ নানা অপরাধের অভয়ারণ্য। তখন প্রায় বনদস্যু বাহিনীগুলোর কাছে জিম্মি হতে হতো জেলেদের। চাহিদামতো চাঁদা দিলে মিলতো মুক্তি, আর নয়তো মৃত্যু। জিম্মি বনদস্যুদের উদ্ধারে তখন প্রায় গহিন বনে অভিযান চালাত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঐ সময় অনেক দস্যুর মৃত্যুও হয়েছে ক্রসফায়ারে, আবার আহত হয়েছে অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। একপর্যায়ে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি বাহিনীর প্রধানসহ ৩২৪ জন দস্যু তাদের কাছে থাকা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল।
এরপর ২০১৮ সালে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু দস্যুমুক্ত বলা সেই সুন্দরবনে এখন প্রায় ঘটছে জেলেদের ওপর হামলার ঘটনা। মুক্তিপণের দাবিতে অসহায় জেলেদের জিম্মি করছে দস্যুরা। গেল ২৭ জানুয়ারি সুন্দরবনের দুবলারচরসংলগ্ন এলাকায় জেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের জিম্মি করার চেষ্টা করে বনদস্যু দয়াল বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় জেলেরা একত্রিত হয়ে অস্ত্রসহ তিন বনদস্যুকে ধরে কোস্ট গার্ড সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে বিছিন্নভাবে দুই-এক জন করে জেলে জিম্মি করলেও এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে পরের দিন ১৫ জেলেকে জিম্মি করে ঐ দস্যুরা। অপহরণের ১৭ দিন পর মাথাপিছু ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯ জন জেলে। মুক্তিপণ নিয়ে জেলেদের চোখ বেঁধে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ এলাকায় জঙ্গল থেকে ওপরে উঠিয়ে দিয়ে যায় বনদস্যু দয়াল বাহিনীর সদস্যরা। মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া জেলে শাহীনুর আলম জানান, জিম্মি করে বনদস্যুরা তাদের অনেক মারধর করে। এমন অবস্থায় তারা আর সুন্দরবন যাবেন না বলে জানান তিনি।
মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা জেলে অমৃত বৈরাগী জানান, দস্যুমুক্ত হওয়ার পর একসময় অনেক জেলে সুন্দরবন যেত নির্ভয়ে। কিন্তু এখন দস্যুতা শুরু হওয়ায় বর্তমানে তারা পেশা পরিবর্তন করে অন্য কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন। অনেক জেলে এখন দিনমজুরের কাজ করতে শুরু করেছেন।
দস্যুদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তারেক আহম্মেদ জানান, তারা নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। কিছু অপরাধীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। এদিকে পর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা মিল্টন রায় জানান, সুন্দরবনে দস্যুতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে জেলেরা আমাদের জানিয়েছেন। তাই এখন বনজীবীরা সুন্দরবনে যাচ্ছেন না। এতে রাজস্ব আদায় নেমেছে অর্ধেকের নিচে।
তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ দিনে চাঁদপাই স্টেশন থেকে ৪৭৮টি পাশ পারমিট দেওয়া হয়েছিল বনজীবীদের। আর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ দিনে সেখানে পারমিট দেওয়া হয় মাত্র ২৩৬টি। অর্থাৎ ২৪২টি পাশ কমেছে।
Leave a Reply