August 2, 2025, 4:26 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে এই সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেন। ঘোষণার পরপরই আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে এ শুল্ক কার্যকর হচ্ছে।
এর আগে ওয়াশিংটন বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। নতুন আদেশে সে হার ১৫ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের আরও কয়েক ডজন দেশের ওপরও পাল্টা শুল্ক আরোপের তালিকা প্রকাশ করা হয় এগুলো হলো ভারত: ২৫%, পাকিস্তান: ১৯%, আফগানিস্তান: ১৫%, ইন্দোনেশিয়া: ১৯%, মালয়েশিয়া: ১৯%, মিয়ানমার: ৪০%, ফিলিপাইন: ১৯%, শ্রীলঙ্কা: ২০%, ভিয়েতনাম: ২০%, ব্রাজিল: ১০%।
নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প বলেন, বহুদিনের বাণিজ্যগত অসাম্য দূর করতেই এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের এক তথ্যপত্রে জানানো হয়, ৭০টিরও বেশি দেশের ওপর এবার ১০% থেকে ৪১% পর্যন্ত রেসিপ্রোকাল শুল্ক কার্যকর হচ্ছে।
চলতি বছরের ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করা হয়। ৯ এপ্রিল এ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয় আলোচনা সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে। মেয়াদ শেষ হয় ৯ জুলাই। তার আগের দিন ট্রাম্প বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫% করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আলোচনা সাপেক্ষে নতুন হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনলো যুক্তরাষ্ট্র। এখন থেকে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে গড় ১৫% পুরোনো শুল্কের সঙ্গে নতুন ২০% পাল্টা শুল্ক মিলিয়ে মোট ৩৫% শুল্ক দিতে হবে।
চলছে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা/
পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। দলে আরও আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, এবং অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী। প্রতিদিন আলোচনা চললেও এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। বৈঠকে ঢাকার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারাও ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন।
বাণিজ্য ঘাটতির প্রেক্ষাপট/
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, আর আমদানি করেছিল মাত্র ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়ায় ৬১৫ কোটি ডলার। এই ঘাটতিই পাল্টা শুল্ক আরোপের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছে ওয়াশিংটন।
চুক্তির জটিলতা: শুধু শুল্ক নয়, আরও কিছু
সূত্রগুলো জানিয়েছে, আলোচনার মূল জটিলতা কেবল শুল্ক নিয়ে নয়, বরং বাণিজ্যিক বাধ্যবাধকতা ও বিধিমালা সংক্রান্ত শর্তাবলী নিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত অনেক শর্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার বাইরে।
শর্তগুলোর অনেকগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এ ছাড়া আলোচনার বিষয়গুলো একাধিক মন্ত্রণালয় ও খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত, ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হচ্ছে।
অন্যান্য দেশ কী পেল/
ভিয়েতনাম: ৪৬% থেকে ২০% তবে প্রত্যাশা ছিল ১১% ইন্দোনেশিয়া: ৩২% থেকে ১৯%, জাপান: ২৫% থেকে ১৫% যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের অঙ্গীকার, ভারত: নতুন করে ২৫% শুল্ক; অস্ত্র-জ্বালানি আমদানিতে অতিরিক্ত পেনাল্টিও যুক্ত, মেক্সিকো: আলোচনার সময় বাড়িয়ে ৯০ দিনের মেয়াদ পুনর্বহাল; এখন আগের চুক্তি বহাল. চীন: এখনো চুক্তি হয়নি
চীনের সঙ্গে এখনো স্থায়ী কোনো চুক্তি হয়নি। সাময়িক বিরতি চলছে ১২ আগস্ট পর্যন্ত। বর্তমানে চীনের পণ্যের ওপর ৩০% এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ১০% পাল্টা শুল্ক বহাল আছে।
Leave a Reply