September 27, 2025, 11:44 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
পেয়াঁজ আমদানি শুরু হলেও দেশের বাজারে দামের স্থিতিশীলতা আসছে না। পাইকারি বাজারে দামের পরিবর্তন হলেও খুচরা বাজার অস্থিতিশীল। এটা সাধারণ ক্রেতাদের ভোগান্তি অব্যাহত রেখেছে। অন্যান্য কারন থাকলেও পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে অস্বচ্ছ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্যের কারনেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জুলাইয়ের শেষ দিকে হঠাৎই দেশের বাজারে বাড়তে শুরু করে পেয়াজের দাম। বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে ১২ আগস্ট বাণিজ্য উপদেষ্টার পেয়াজ আমদানির ঘোষণার পর পার্শ^বর্তী ভারত থেকে আমদানি শুরু হয় এ পণ্যটির। ভারত থেকে বাংলাদেশ নিয়মিত পেয়াজ আমদানি করলেও বিগত ৪ মাস ২০ দিন এ আমদানি বন্ধ ছিল।
দেশের দুটি বন্দর –ভোমরা ও হিলি সূত্রে জানা গেছে ১৪ আগস্ট থেকে নতুন আমদানি শুরু হবার পর ঐ দিন পরবর্তী তিন দিনে দুটি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ২ হাজার ২৭০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত তিনদিনে সাতক্ষিরার ভোমরা বন্দর দিয়ে ২ হাজার টন ও দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে ২৭০ টান পেঁয়াজ প্রবেশ করেছে।
ভোমরা কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা রাসেল আহম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ পেঁয়াজ ইতোমধ্যে বাজারে প্রবেশ করেছে।
কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, পণ্যটির বাজার দর স্থিতিশীল হচ্ছে না। পাইকারি ও খুচরায় প্রতিদিনই এ দাম উঠানামা করছে। দেশের অভ্যন্তরে অনচল ভেদে দামও ভিন্ন দেখা যাচ্ছে।
বন্দর সূত্র বলছে, সরবরাহ বাড়ার পর ১৬ আগস্ট বন্দরবর্তী পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রথম দফায় কেজিতে ৭ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। প্রত্যাশা ছিল এ বাজার কমার ধারা অভ্যাগত থাকবে। কিন্তু এরপর থেকেই দামে নানা ধরনের কারসাজি চলছে।
দিনাজপুরের হিলিতে, ১৬ আগস্ট পাইকারি বাজারে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেয়াজের দাম ৬৫-৬৬ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু সেখানে পুনরায় দাম বেড়েছে। ২২ আগস্ট (শুক্রবার) হিলির হাকিমপুরে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে দাম। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭ টাকা বেড়ে ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, হঠাৎ করে এ বন্দরে আমদানি অনুমতি বন্ধ করে দেয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এরপর আর কোনো ইমপোর্ট পারমিট দেয়নি সরকার।
শুক্রবার (২২ আগ্রস্ট) সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল আজিজ এবং আমিনুর রহমান জানান, ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে ঢুকতেই দেশি পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে, আগে বিক্রি হতো ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজিতে।
অন্যদিকে, রাজধানী ঢাকায় এখনো প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মান ও আকারভেদে সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকায়। খুচরা বিক্রেতারা সরবরাহ ঘাটতির দাবি করছেন।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, “দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এখন নিয়মিত পেঁয়াজ আসছে। কিছুটা সমস্যা কয়েকদিন থাকতে পারে। কিন্তু, তিনি বাজাওে সরবরাহ যথেষ্ট বলে দাবি করেন। তিনি জানান, বন্দর থেকে পেয়াঁজ তুলে অন্যত্র যদি কেউ মজুত করে ফেলে সেক্ষেত্রে দাম কমানো মুশকিল।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ জানান, স্থানীয় উৎপাদন দেশের চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে পারে না। কত টন আমদানি করতে হবে এ তথ্য তো সরকারের কাছে রয়েছে। সঠিক সময়ে আমদানিটা হচ্ছে কিনা এটাই মূল বিষয়। এটা করতে পারলে বাজার অস্থিতিশীল হবার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে সাতক্ষিরার জেলা প্রশাসক মুস্তাক আহমেদ জানান, বাজার নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
আমদানি সর্তকতা/
সরকারী নীতি-নির্ধরক ও কৃষি বিষয়ে বিশেজ্ঞরা বলছেন, যে কোন আমদানি করার আগে সরকারকে সর্তক হতে হয় পণ্যটির দেশী উৎপাদন পরিস্থিতি বিশেষ করে কৃষকদের কথা। পণ্যটি উৎপাদনে কৃষকরা সরাসরি জড়িত থাকে। পেঁয়াজ পণ্যটি দেশেই বেশীরভাগ উৎপাদিত হয়ে থাকে। এই পরিমাণ প্রায় ৩৯ লাখ টন যেখানে দেশের বাজারে মোট চাহিদা ৪১ থেকে লাখ ৪২ টন। তবে সংগ্রহ-পরবর্তী ক্ষতি পোষাতে আরও ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ মন্ত্রণালয় নিয়ে থাকে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে কৃষকদের পেয়াজ উৎপাদন খরচ ছিল জাত ও এলাভেদে কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৪৮ টাকার মধ্যে।
কৃষি সচিব ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, ইচ্ছে মতো আমদানি করে দাম কমিয়ে দিলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তিনি বলেন, কৃষকদের জন্য ন্যায্য খুচরা মূল্য নিশ্চিত করেই পেঁয়াজের দাম কমাতে হবে। এজন্য, সরকারকে সবর্দায় আমদানি বিষয়ে সর্তক থাকতে হয়।
এদিক, অন্যান্য কারন থাকলেও পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে অস্বচ্ছ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্যের কারনেই আমদানির পর দামের অস্থিতিশীলতা কাটে না বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর ড. মাহবুবুল আরফিন জানান, যেখানে উৎপাদন যথেষ্ট সেখানে সখানে এ ধরনের পণ্যবাজার অস্থির হওয়ার পেছনে মহল বিশেষের অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করার বাসনা রয়েছে এটা স্পষ্ট।
তিনি প্রশ্ন রাখেন আমদানিস্থল থেকে ৩০০ কিলোমিটার দুরত্বে মণপ্রতি দামের বৃদ্ধি ঘটবে, কেজিপ্রতি কেন ? তিনি বলেন এখানে সেটাই ঘটছে। এর মানে হলো সরবরাহ চেইনে মুনাফালোভীদের উপস্থিতি রয়েছে। তারা সুযোগের অপব্যবহার করছে। তিনি শুধু আমদানি অনুমতি দিয়েই সরকারের দায়িত্ব শেষ বলে মনে করেন না। সরবরাহ ও বিপণনে সরকারের স্পষ্ট মনিটরিং থাকতে হবে বলে তার অভিমত।