September 27, 2025, 11:48 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ইতিমধ্যে সাড়ে ১০ বিলিয়ন ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। নীরবে অথচ কার্যকরভাবে দেশের জ্বালানি খাতে অবদান রেখে চলা এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে প্রতিমাসে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ যোগ করছে।
শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, স্থানীয় অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও পরিবেশ রক্ষায়ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।
যৌথ উদ্যোগে ১,৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র/
বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা ১,৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি লিমিটেড।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালের মার্চে দ্বিতীয় ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। বর্তমানে উভয় ইউনিট থেকেই পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
উৎপাদন সাফল্যের পরিসংখ্যান/
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কার্যক্রমের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন মাসে সর্বোচ্চ ৬৭৬.৭৩ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ২০২৪ সালের ১ জুন ইউনিট-২ সর্বোচ্চ দৈনিক উৎপাদন হার ১০০.৩% অর্জন করে। ১৫ জুন ইউনিট-১ দৈনিক উৎপাদন হার ১০০.৪৬% রেকর্ড করে। এ বছরের এপ্রিলে ইউনিট-১ এর মাসিক কার্যক্ষমতা ছিল প্রায় ৯৯.৯৬%, আর জুনে তা দাঁড়ায় ৯৭.২৮%। গত এপ্রিল-জুন সময়ে স্টেশন ডিসি ছিল ৯২.২%।
প্রকল্প পরিচালক রমানাথ পূজারীর ভাষায়, “এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৫৯ বিলিয়ন ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করেছি। প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী আমরা উৎপাদন ধরে রাখতে পারছি। দিনে সাধারণত ৪০০-৫০০ মেগাওয়াট এবং রাতে ৬০০-৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করছি।”
অর্থনীতিতে প্রভাব/
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমতে থাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বুয়েটের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, “রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের শিল্পায়ন ও অর্থনীতির জন্য অবদান রাখছে। গ্যাসের মজুদ কমে আসায় এবং এলএনজি আমদানিতে সীমাবদ্ধতা থাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ এখন অপরিহার্য।”
নিরবচ্ছিন্ন কয়লা সরবরাহ/
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক চাপে পড়লেও কয়লা সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। বর্তমানে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং ভবিষ্যতে চার থেকে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন কয়লার মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির উদ্যোগ/
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ নয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারেও আগ্রহী। ইতোমধ্যে কেন্দ্রটির ভবন ও খালি জায়গায় ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। টাউনশিপ, লেবার কলোনি ও জেটি এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে।
রমানাথ পূজারী জানান, “এটি প্রাথমিকভাবে একটি পাইলট প্রকল্প। আশা করছি এক বছরের মধ্যেই উৎপাদনে যেতে পারবে। ভবিষ্যতে আরও ৪০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও রয়েছে।”
স্থানীয় উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান/
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি নারী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য নানা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রমও পরিচালনা করছে। ফলে এটি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্র নয়, বরং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবেও কাজ করছে।