November 28, 2025, 3:54 am

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
চাল, গম ও ধান মিলিয়ে সরকারের মোট খাদ্যশস্য মজুদ নেমে এসেছে প্রায় ১৩ লাখ টনে। এর মধ্যে শুধু চালের পরিমাণই প্রায় পৌনে ১২ লাখ টন। তিন মাস আগেও এই মজুদ ছিল ২১ লাখ টনের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে মজুদ ঘাটতি পূরণ ও বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আরও ৩ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে দেশে আমন ধান কাটা চলছে এবং অচিরেই নতুন চাল বাজারে আসবে। এ অবস্থায় চাল আমদানির প্রয়োজনীয়তা কম হলেও স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ বাড়ানো আরও কার্যকর হতে পারে।
মজুদের দ্রুত ঘাটতি: তিন মাসে ৮ লাখ টন কমেছে/
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের হাতে খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে মোট ১৩ লাখ ১৪ হাজার ১৮৯ টন। এর মধ্যে—
চাল: ১১,৭৫,৯৮৪ টন
গম: ১,৩৮,১৪০ টন
ধান: ৯৮ টন
গত আগস্টে সরকারের হাতে মজুদ ছিল ২১ লাখ টন, এর মধ্যে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার টনই ছিল চাল। অর্থাৎ তিন মাসে মজুদ কমেছে প্রায় ৮ লাখ টন।
আগস্টে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ টন চাল এবং ৪ লাখ টন গম আমদানির পরিকল্পনা ছিল। পরবর্তীতে জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ক্রয়ের সুবিধার্থে আন্তর্জাতিক দরপত্রের সময়সীমা কমাতেও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
পুনরায় চাল আমদানির সুপারিশ/
গতকাল সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নতুন দুটি প্রস্তাব তোলা হয়। এর মধ্যে—
৩ লাখ টন চাল আমদানি/
আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দ্রুত ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০২৫-এর বিধি ১০২(১)(ক) প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
৩ লাখ টন গম আমদানি/
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এবং ২০২৫ সালের বিধিমালার আলোকে G2G ভিত্তিতে আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটির সভায় ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন পায়। সিঙ্গাপুরের আদিত্য বিরলা গ্লোবাল ট্রেডিং থেকে এই চাল কিনতে ব্যয় হবে ২১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, প্রতি টনের দাম ৩৫৪.১৯ ডলার।
চাহিদা-জোগান ও আগের আমদানির চিত্র/
ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, দেশে বছরে ৩ কোটি ৫০–৮০ লাখ টন চালের চাহিদা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদন ব্যাহত হলে আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করা হয়।
২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে।
এর মধ্যে—
সরকারিভাবে: ৮.৩৫ লাখ টন
বেসরকারি খাতে: ৪.৭ লাখ টন
একই সময়ে ৬২ লাখ টন গম আমদানি করা হয়েছে।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাড়ায় বাড়ছে চাহিদা
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মেয়াদ এক মাস বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। আগস্ট–নভেম্বর ৪ মাস চলার পর ডিসেম্বর–জানুয়ারি স্থগিত থাকবে। এরপর ফেব্রুয়ারি–মার্চ আবার শুরু হবে। মেয়াদ বাড়ায় চালের অতিরিক্ত দেড় লাখ টন চাহিদা তৈরি হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জামাল হোসেন বলেন—
“আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম এখন যুক্তিযুক্ত। মজুদ বাড়ানো গেলে তা খারাপ নয়। যদিও বর্তমানে আমাদের হাতে পর্যাপ্ত মজুদ আছে, তবুও নিরাপত্তার জন্য আগেভাগে অনুমোদন রাখা প্রয়োজন।”
তিনি আরও জানান, সব চাল একসঙ্গে কেনা হবে না; প্রথম কয়েকটি প্যাকেজ কেনার পর মজুদ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আমদানি স্থগিতও রাখা হতে পারে।
ধান–চাল সংগ্রহ: এবার লক্ষ্য ৭ লাখ টন/
২০২৫–২৬ আমন মৌসুমে সরকার মোট ৭ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে—
সেদ্ধ চাল: ৬ লাখ টন
আতপ চাল: ৫০ হাজার টন
ধান: ৫০ হাজার টন
সংগ্রহ মূল্য—
সেদ্ধ চাল: ৫০ টাকা/কেজি
আতপ চাল: ৪৯ টাকা/কেজি
ধান: ৩৪ টাকা/কেজি
সংগ্রহ অভিযান ২০ নভেম্বর–২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন: এখনই চাল আমদানির প্রয়োজন নেই
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান মনে করেন—
আমন ধান কাটা চলছে, দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন চাল বাজারে আসবে।
এ সময় চাল আমদানির প্রয়োজন কম; এটি করলে কৃষক দাম কমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
গম আমদানি জরুরি, কারণ দেশে এটির ঘাটতি আছে।
অপ্রয়োজনীয় চাল আমদানিতে বিদেশি উৎপাদক লাভবান হয়, দেশী কৃষক নয়।
চাতালভিত্তিক সংগ্রহ ব্যবস্থা কৃষকের জন্য লাভজনক নয়; সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন—
“স্থানীয় উৎপাদন ভালো হলে চালের সংকট হবে না। এ সময় অতিরিক্ত আমদানিতে বাজার দাম কমে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই স্থানীয় সংগ্রহ বাড়ানোই উত্তম।”