February 5, 2025, 1:39 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দেশের ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও বিদ্যমান পোষ্য কোটা। কোটা বিরোধী আন্দোলনে জড়িত এমন শিক্ষার্থীরা চান এসব পোষ্য কোটা বাতিল হোক, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কোটা রেখে তার যৌক্তিক সংস্কার চান।
বিশ^বিদ্যালয়গুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ১১ ধরনের কোটার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো পোষ্য কোটা, যে কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীরা নির্দ্দিষ্ট মার্কস পেলেই ভর্তি হতে পারে।
এর বাইরেও বাকি ১০ ধরনের কোটা রয়েছে। এগুলো হলো প্রতিবন্ধী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, খেলোয়াড়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অ–উপজাতি (পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী বাঙালী), বিদেশি শিক্ষার্থী, দলিত, চা–শ্রমিক ও বিকেএসপি (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) কোটা।
অবশ্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ১১ ধরনের কোটার সব কটি নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য কোটা ছিল, যার আওতায় উপাচার্য ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারতেন। এখানে এই পোষ্য কোটার মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তান, স্ত্রীদের বাইরে ভাই-বোনদের ভর্তি করাতে পারেন উপাচার্য। পরীক্ষায় পাস করলেই পোষ্যরা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তির সুযোগ পান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যতজন আবেদন করেন, ততজনকেই ভর্তি করা হয়।
তবে অন্য বিশ^বিদ্যালয় গুলোতে পোষ্য কোটায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানও স্ত্রীরা রয়েছেন।
এবার অবশ্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় পরিবর্তন এনে প্রতি বিভাগে চারজনের বেশি ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পোষ্যরা ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এবং কোনো নির্দিষ্ট বিভাগে ভর্তির শর্ত পূরণ করলে, তাকে সেখানে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। এ জন্য মেধাতালিকার কাউকে বঞ্চিত করা হয় না; বরং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিভাগে একটি দুটি আসন বাড়ে। চার বছরে ভর্তির চিত্রে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে ২৪ থেকে ৩০ জন ভর্তি হয়েছেন পোষ্য কোটায়।
এই একই ধরনের নিয়ম চালু রয়েছে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে। এখানে পোষ্য কোটার নির্দিষ্ট আসন সংখ্যা নেই তবে এখানে এসব পোষ্যদের পাস মার্কস কমিয়ে রাখা হয়েছে। এখানে কমপক্ষে ২০ পেলেই যে কোন পোষ্য যে কোন বিভাগে ভর্তি হতে পারেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্যদের জন্য ১৬৬টি আসন রয়েছে। তবে সেখানে ভর্তি হয় সাধারণ মেধাতালিকার বাইরে থেকে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটার নির্দিষ্ট আসন সংখ্যা নেই। পাস করলেই পোষ্য কোটায় ভর্তি হতে পারেন আবেদনকারীরা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটায় ২০টি আসন রয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ ধরনের কোটা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৮টি আসন রাখা হয়েছে পোষ্য কোটায়, যা ওয়ার্ড কোটা নামে পরিচিত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের সমন্বয়ক এসএম সুইট মনে করেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বিদেশি শিক্ষার্থী, দলিত, চা শ্রমিক এরকম কয়েকটি ছাড়া বিশ^বিদ্যালয়ে কোন কোটা থাকতে পারবে না।
তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ কোনক্রমেই কোটারী হতে পারে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আবদুর রশিদ জানান, কোটায় সংস্কার করতে হবে। কোনোমতে পাস করলেই ভর্তির সুযোগ দেওয়া যাবে না।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটা সংস্কার করে হলেও রাখার দাবি করছেন। এই মুহুর্তে কোটা বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন চলছে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে। সেখানে ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। আন্দোলনের পর গত ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা ৩ শতাংশ করার কথা জানায়। তবে আন্দোলন না থামার ফলে শিক্ষক ও কর্মকর্তার সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল করে শুধু কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত জানায় প্রশাসন। তা–ও মানেননি আন্দোলনকারীরা। পরে উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব পোষ্য কোটা পুরো বাতিলের ঘোষণা দেন, যার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তার হোসেন বলেন, দাবি না মানা হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা।
ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ মনে করেন, এসব কোটাগুলো দীর্ঘদিনের বিভিন্ন ঘটনা-প্রবাহ ও অবস্থার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে। পরিবর্তিত সময়ে সবকিছুরই একটি যৌক্তিক সংস্কার হতেই পারে। সবমহলের সাথে আলোচনা করেই একটি সঠিক ও সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
Leave a Reply