June 21, 2025, 1:42 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
থাকবে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ/একটি ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্ম গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান বেনাপোল বন্দরে জলাবদ্ধতায় স্থবির বাণিজ্য কার্যক্রম ইসরায়েলি হাসপাতালে বোমা হামলা শিরোনাম হয়, ইরানে হলে তা হয় না কেন? ভোমরা শুল্ক স্টেশন/১০ মাসে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে শতকোটি টাকা ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মৃত্যুর ১০ মাস পর হত্যা মামলা, কারাগারে বেরোবি শিক্ষক, সমালোচনার ঝড় জাতীয় নির্বাচনে পোস্টার নিষিদ্ধ, প্রচারে অনুমোদন বিলবোর্ড ও সোশাল মিডিয়া ৫ আগস্ট উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা, ১ জুলাই থেকে কর্মসূচি শুরু হবে ইরানে এ পর্যন্ত নিহত ৬৩৯, ১ হাজার ৩২০ জনের বেশি আহত ইরানের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ চান ট্রাম্প, মর্যাদাবান হায়দারের নামে যুদ্ধ শুরু : আয়াতুল্লাহ খামেনি কুষ্টিয়াসহ ১৭ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

চুরির অপবাদ দিয়ে নারীকে চুল কেটে নির্যাতন/ মামলায় গ্রেফতার আসামি ছিনিয়ে নিতে থানা ঘেরাও

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে এক নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দেওয়ার অপরাধে গ্রেফতার হওয়া তিন অভিযুক্ত তিন নারীকে ছাড়িয়ে নিতে একদল লোক থানায় এসে হট্রগোল করেছে। জানা গেছে, থানায় হট্রগোল করা সবাই একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী।
অন্যদিকে, ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামী অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন।
উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় প্রকাশ, সোমবার (৯ জুন) বিকেলে রিনা খাতুন নামের ঐ নারী প্রতিবেশী রিপন আলীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন এমন অভিযোগ তোলা হয়। এ অভিযোগে তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয়। এরপর রিনার স্বামী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
ঘটনাটি এখানেই শেষ হয়ে যায় না। এরপর স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনসহ বেশ কিছু নারী-পুরুষ রাত ৮টার দিকে রিনার বাড়ি ভাঙচুর করে তাকে তুলে নিয়ে যায়। ফের রিপনের বাড়ি নিয়ে এসে তাকে ব্যাপক মারপিট ও মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। পরে সেখানে সালিশ বসান শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম। সালিশে রিনার দুটো গরু, একটা ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রিনা খাতুন। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন। মাথার চুল কাটা।
এসময় রিনা বলেন, রিপন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। বিকেলে তাকে তিনি ডাকতে গিয়েছিলেন বাড়িতে কাজের জন্য। কিন্তু রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে বেঁধে রাখে। তারপর কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করা হয়। এরমধ্যে মুক্তি ও পারভিন তার মাথার চুল কেটে দেয়। ঐ নারী জানান, বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু-ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছেন। আমি এর বিচার চাই।
মির্জাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রিপনের বাড়িতে পড়ে আছে দড়ি ও কাটা চুলের অংশ। আর রিনার ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ভেতরে আসবাবপত্র ভাঙচুর। গোয়ালঘরে নেই গরু-ছাগল।
ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন দাবি করেন, তার ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা চুরি করে পারাচ্ছিল বিরা। তিনি আরও বলেন, রিনা এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেন। সেই রাগে লোকজন ধরে তাকে মারধর করে চুল কেটেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নয়। তার বাড়িতে কিসের ৪১ হাজার টাকা ছিল এ প্রশ্ন করলে তিনি জবাব দিতে পারেন নি।
অভিযুক্ত রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন বলেন, তিনি দড়ি দিয়ে বেঁধে শুধু একটা চর মেরেছন। কিন্তু কারা চুল কেটেছে তা তিনি জানেন না।
আরেক অভিযুক্ত কাশেম বলেন, রিনা বিভিন্ন বাড়ি চুরি করেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাতে সালিশে তার গরু-ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এসব বিষয়ে মেম্বরের সঙ্গে কথা বলুন।
গরু-ছাগল নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম। তিনি বলেন, তিনি শুধু ওই নারীকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছেন। আর কি ঘটেছে তা তিনি জানেন না।
তিনি বলেন, আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।
এ ঘটানয় মঙ্গলবার (১০ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। এ মামলায় বুধবার (১১ জুন) সকাল ৯টার দিকে তিন নারী আসামিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার আসামিদের ছিনিয়ে নিতে সকাল ১১টা থেকে থানা ঘেরাও করে রাখেন শতাধিক গ্রামবাসী। থানা চত্বরে সকাল ১১টা ৩৫ মিনিট থেকে ৫১ মিনিট পর্যন্ত গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) পিকআপে আসামিদের আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
আসামিরা হলেন- উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভিন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রশিদ বলেন, শারীরিক নির্যাতন, চুল কর্তন, ভাঙচুর-লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক নারী মামলা করেছেন। মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
থানা ঘেরাও করার ঘটনা স্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, আসামিদের আদালতে নেওয়ার সময় লোকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবুও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
আমানুর আমান, কুষ্টিয়া
১১/৬/২০২৫

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net