June 20, 2025, 9:06 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/বিবিসি অবলম্বনে/
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একই ধরনের দুটি হৃদয়বিদারক ঘটনার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অনেক ইরানি নাগরিক।
ইসরায়েলের বিরশেবা শহরের একটি হাসপাতালে বোমা হামলার পরপরই সেটি বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান আন্তর্জাতিক সাংবাদিকরা, নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং হয় এবং খোলামেলাভাবে তথ্য দেওয়া হয়। ফলে ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক মনোযোগ পায়।
অন্যদিকে, এর মাত্র তিন দিন আগে ইরানের কেরমানশাহ শহরের একটি হাসপাতালেও ভয়াবহ হামলা হয়েছিল। কিন্তু সেটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রায় উপেক্ষিতই থেকে যায়। এ ছাড়া ইরানের জরুরি পরিষেবার প্রধান আজ শুক্রবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিকে জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে ইসরায়েলি হামলায় পাঁচটি ইরানি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষতি হয়েছে। তারও খবর দেখা যায়নি।
এর মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ইরানে সাংবাদিকদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ, সেন্সরশিপ এবং তথ্যপ্রবাহে বাধা। বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নেই, স্থানীয় সাংবাদিকদের কাজ করতে দেওয়া হয় না, ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়—ফলে তথ্য উঠে আসে সাধারণ মানুষের তোলা অস্পষ্ট ভিডিও বা পোস্ট থেকে।
ইসরায়েলে দ্রুত হতাহতের সংখ্যা ও অবস্থার আপডেট দেওয়া হলেও, ইরানে ইসরায়েলি হামলার দুদিন পর ২২৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানানো হয়—কোনো ভৌগোলিক বিশ্লেষণ বা হাসপাতালভিত্তিক বিস্তারিত ছাড়াই। কেরমানশাহর হাসপাতালের ওপর হামলার পর কোনো নির্দিষ্ট তথ্যই আর প্রকাশ পায়নি।
এ কারণে ইরানের বহু গল্পই হারিয়ে যাচ্ছে। শোকাহত পরিবারগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরার চেষ্টা করলেও, তা কখনোই পেশাদার সংবাদ কাভারেজের বিকল্প হতে পারে না।
যুদ্ধের সময় তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গিই জনমত তৈরি করে। কেরমানশাহর ঘটনা নিয়ে যে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে, তা শুধু সেন্সরশিপের নয়—এটি বিশ্ব গণমাধ্যমের দৃষ্টিকোণ এবং একপাক্ষিকতা নিয়েও বড় প্রশ্ন তোলে। বাস্তবতা হলো, যখন সংবাদ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, তখন সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ এবং তাদের হারানোর গল্পগুলো।
Leave a Reply