November 13, 2025, 6:33 pm

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস এ ঘোষণা দেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এতে কোনোভাবেই চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে না। বরং এই উদ্যোগ নির্বাচনকে আরও উৎসবমুখর ও ব্যয়-সাশ্রয়ী করবে। গণভোট আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন যথাসময়ে প্রণয়ন করা হবে।”
সংবিধান সংস্কারে ঐকমত্য/
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গত নয় মাস ধরে রাষ্ট্রগঠনের নতুন কাঠামো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করেছে।
এই আলোচনার ফলেই সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
“এটি ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি সাফল্য,” বলেন ড. ইউনূস। “আমি কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।”
জুলাই সনদ ও গণভোটের প্রশ্ন/
ড. ইউনূস জানান, গণভোটে জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’-এর ভিত্তিতে প্রণীত একটি প্রশ্ন।
তিনি সেই প্রশ্নটি জাতির উদ্দেশে ভাষণে পাঠ করে শোনান।
গণভোটের প্রশ্ন হবে—
“আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?”
প্রস্তাবগুলো হলো—
(ক) নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী গঠন করা হবে।
(খ) আগামী সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট (bicameral)—জাতীয় সংসদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ (Upper House) গঠিত হবে। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে এই উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
(গ) নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারের বিকেন্দ্রীকরণসহ ৩০টি বিষয়ে যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা ভবিষ্যতের সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
(ঘ) জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কারগুলোও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়িত হবে।
ড. ইউনূস বলেন, “গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটের মাধ্যমে তাদের মতামত জানাবেন।”
রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ও আইনগত প্রক্রিয়া
এর আগে, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫”-এ স্বাক্ষর করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে গণভোট আয়োজনের আনুষ্ঠানিক পথ উন্মুক্ত হয়েছে।
এর আগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
পটভূমি ও প্রাসঙ্গিকতা/
গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়নের দুটি বিকল্প প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেয়।
রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরিত আদেশের ভিত্তিতেই এবার গণভোট আয়োজন করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওইদিন জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন, যা পরবর্তীতে এই “জুলাই জাতীয় সনদ”-এর ভিত্তি হয়ে ওঠে।