November 28, 2025, 4:33 am

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার ও লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে চলমান মামলাকে ‘কৃত্রিম, সাজানো ও অন্যায্য’ বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী। বৃহস্পতিবার, রায় ঘোষণার আগে তারা যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলামের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ অভিযোগ করেন।
টিউলিপ সিদ্দিক জানুয়ারিতে ব্রিটিশ সরকারের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তার বিরুদ্ধে দেওয়া মামলার রায় ও সাজা তার অনুপস্থিতিতেই ঘোষণা করা হবে। প্রসিকিউশন সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাইছে।
লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেটের লেবার এমপি সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনে দমন-পীড়নের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
সাবেক কনজারভেটিভ বিচারমন্ত্রী রবার্ট বাকল্যান্ড কিসি এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিভসহ উচ্চপর্যায়ের আইনজীবীরা তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেন, মামলার পুরো প্রক্রিয়ায় সিদ্দিক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারা বলেন, তিনি নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ জানতেও পারেননি এবং আইনজীবী নিয়োগের সুযোগও পাননি। এছাড়া, তিনি যে আইনজীবীকে নিযুক্ত করেছিলেন তাকে গৃহবন্দি করা হয় এবং তার মেয়েকে হুমকি দেওয়া হয়।
আইনজীবীরা লিখেছেন, “এ ধরনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ কৃত্রিম এবং অন্যায্য। এটি বিচার নয়, বরং সাজানো অভিযোগের মাধ্যমে কাউকে দোষী করার চেষ্টা।”
টিউলিপ সিদ্দিকসহ তার খালা, মা, ভাই ও বোন এবং আরও অনেকে গত আগস্ট থেকে ঢাকায় বিভিন্ন অভিযোগের মুখে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে ঢাকার একটি উপশহরে তার মায়ের জন্য জমি বরাদ্দ করিয়েছিলেন। তবে সিদ্দিক সবসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বারবার আইনের শাসন ও ন্যায়ের গুরুত্বের কথা বললেও বাস্তবে যে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে, তা নিয়ে শীর্ষ ব্রিটিশ আইনজীবীরা ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। তারা উল্লেখ করেন, সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং লন্ডনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বে আছেন, তাই তাকে ‘পলাতক’ বলা যায় না। প্রয়োজনে যথাযথ কারণ দেখিয়ে তাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের আবেদন করা যেত।
আইনজীবীদের অভিযোগ, সিদ্দিককে অভিযোগপত্র বা প্রমাণাদি দেখানো হয়নি এবং আইনজীবী নিয়োগেও বাধা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত দুর্নীতি দমন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মিডিয়ায় মন্তব্যও বিচারপ্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন জাগিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “ক্ষমতাসীনদের প্রকাশ্য মন্তব্য কোনোভাবেই নিরপেক্ষ ও বাধাহীন বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অনুপস্থিতিতে যে বিচার চলছে, তা ন্যায্য নয়; সিদ্দিক নিজেকে রক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছেন না এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায়ের মানদণ্ড থেকেও প্রক্রিয়াটি অনেক দূরে। আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই—এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করে ন্যায়সঙ্গত বিচার নিশ্চিত করা হোক।”
এর আগে অভিযোগ উঠেছিল, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালার ক্ষমতার প্রভাব ব্যবহার করে সুবিধা নিয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করে জানুয়ারিতে সিদ্দিককে নির্দোষ ঘোষণা করেন। যদিও তিনি মন্তব্য করেছিলেন, পারিবারিক সম্পর্ক ও দায়িত্বের কারণে সিদ্দিকের ‘সম্ভাব্য সুনামহানির ঝুঁকি’ সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।
বাংলাদেশের মামলার কারণে তার সরকারি পদে অবস্থান চাপের মুখে পড়ায় সিদ্দিক জানুয়ারিতেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক সেক্রেটারি ও সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশের হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি।