September 9, 2025, 7:34 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
দেশে দাম ২৫০০, ভারতে যাচ্ছে ১৫০০ টাকা দরে ১২০০ টন ইলিশ রাজবাড়ীতে মোটরসাইকেল রেসে প্রাণ গেল দুই বন্ধুর কেরুর আধুনিকায়ন ১৩ বছরেও শেষ হয়নি, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি একাদশে ভর্তি শুরু, জেলা পর্যায়ে নন-এপিওতে ভর্তি ফি ৩ হাজার টাকা, ক্লাস ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত, আসছে মিড-ডে মিল ইউক্রেন চুক্তি মানতে না পারলে সামরিকভাবে লক্ষ্য পূরণ করবে রাশিয়া: পুতিন সংকটাপন্ন অবস্থায় ফরিদা পারভীন, চিকিৎসায় সহায়তায় প্রস্তুত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেলো সুপ্রিম কোর্টে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে মাছ রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ টন মেহেরপুরে বিদেশি পিস্তল-গুলিসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার

বেনাপোল চ্যালেঞ্জের মাঝেও রাজস্ব আদায়ে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউস ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বাণিজ্যিক বিঘ্ন সত্ত্বেও এই সাফল্য এসেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দেশের একমাত্র রাজস্ব কর্তৃপক্ষ, ওই অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বেনাপোল কাস্টমস আশাকে ছাড়িয়ে ৭ হাজার ২১ কোটি ৫১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে—লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেশি, যা ৪.৭২ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।
বন্দর সূত্র জানায়, আমদানির পরিমাণ কমলেও রাজস্ব আদায়ে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়েছে। মোট আমদানি হয়েছে ১৪,৯৮,৮৯৮ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৮২,২৪৮ মেট্রিক টন বা ৫.২০ শতাংশ কম। রপ্তানি ক্ষেত্রেও পতন হয়েছে, ৩০,৬৬৫.১৫ মেট্রিক টন বা ৭.৪৪ শতাংশ কমেছে। এসব সত্ত্বেও রাজস্ব ৮১০ কোটি ৯১ লাখ টাকার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ১৩.৫১ শতাংশের উন্নতি নির্দেশ করে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এই সাফল্যের কারণ হিসেবে রাজস্ব ফাঁকি রোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন, সঠিক মনিটরিং ও সঠিক শুল্ক নির্ধারণকে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি দক্ষতা বাড়াতে এবং ট্যাক্স ফাঁকি প্রতিরোধে একাধিক সংস্কার গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি, দ্রুত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ, এবং ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি।
জানুয়ারিতে, বেনাপোল কাস্টমসে নির্দিষ্ট একটি তদন্ত, গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা (আইআরএম) বিভাগ চালু করা হয়েছে যা ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্য কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, চোরাচালান রোধ এবং রাজস্ব ফাঁকির তথ্য সংগ্রহের কাজ করে। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ জানান, সীমানায় কার্গো টার্মিনাল এবং স্ক্যানিং যন্ত্রপত্র স্থাপনের মতো পদক্ষেপ বাণিজ্য কার্যক্রমকে অনেক দ্রুততর ও সুশৃঙ্খল করেছে।
এছাড়াও, ২৪ ঘণ্টা ও সাপ্তাহিক সাত দিন বন্দরের কাজ চালু করার ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়েছে, যা বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত, ঝামেলা কমানো এবং রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে।
প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশের স্থলবাণিজ্য প্রতিবার বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে হয়। প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য এই বন্দরে আমদানি হয়, যা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আনে। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক ভারতে রপ্তানি হয়।
বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রধান রাজস্ব উৎস ছিল তাজা ফল, বোনা কাপড়, অ্যালুমিনিয়াম, মোটর যন্ত্রাংশ, ডিজেল ইঞ্জিন, ফেরো-সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ, লোহার টাওয়ার, স্টিল ব্লেড, ল্যাটেক্স এবং পাইপ। সঠিক মূল্যায়ন ও কার্যকর শুল্ক আদায় এই রাজস্ব বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন তারফদার জানিয়েছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩,৫০,৭৭৪.৮৫ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩,৮১,৪৪০.৭৭ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩০,৬৬৫.১৫ মেট্রিক টন কম। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে সাময়িক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়, যার ফলে ভারত থেকে সুতা আমদানির পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবুও বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব আদায় শক্তিশালী ছিল।
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের কঠোর নজরদারি রাজস্ব বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, “বেনাপোল বন্দর কাঙ্ক্ষিত অবকাঠামো উন্নয়ন পেলে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হতে পারে।”
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, “অর্থবছরের শুরু থেকেই আমরা রাজস্ব আদায়ে জোর দিয়েছি। অনিয়ম বা ফাঁকি ধরা পড়লেই দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামগ্রিক আমদানিতে ৮ শতাংশ হ্রাস সত্ত্বেও রাজস্বে ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি একটি বড় সাফল্য।”
তিনি আরও জানান, আন্দোলন ও অস্থিরতার মধ্যেও কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে গেছেন এবং কার্যকর তদারকির ফলে এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে এখনও অনেক অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে যথাযথ উন্নয়নের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে তারা আশাবাদী। ইতিমধ্যেই আধুনিক গুদাম, সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
আমান/

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net