July 31, 2025, 2:24 am
দৈনক কুষ্টিয়া অনলাইন/
যশোরে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র ও নিম্নআয়ের ৭১৬ জন গ্রাহকের বীমার মেয়াদ পূর্ণ হলেও ১ কোটি ৫ লাখ টাকা পরিশোধ না করে তা আত্মসাৎ করার অভিযোগে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও সিইওসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। প্রতারণা, অনিয়ম ও টালবাহানার কারণে হতাশাগ্রস্ত গ্রাহকেরা টাকা ফেরতের দাবিতে ন্যায়বিচারের আশায় আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
মামলায় আসামিরা হলেন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন,ভাইস চেয়ারম্যান হোসনেয়ারা নাজ,পরিচালক জামাল মিয়া, মোহাম্মদ জুলহাস, সালেহ হোসেন, কামাল মিয়া ও আব্দুল হাই,
সিইও এ কে দাশ এবং সিএফও হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
মামলাটি করেন যশোরের সীতারামপুর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক শেখ কামাল হোসেন। মামলা করার আগে অভিযুক্তদের উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। তাতে সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা জানিয়েছেন, কেউ ডিম-মুরগি বিক্রি করে, কেউ দিনমজুরি করে, কেউবা আধা পেট খেয়ে সঞ্চয় করেছেন এই টাকা—যা এখন হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায়।
১৯৯৬ সালে ‘শরীয়াহভিত্তিক জীবন বীমা’র স্লোগান তুলে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স যশোরে কার্যক্রম শুরু করে। বিভিন্ন সময় ঠিকানা বদলে বর্তমানে তাদের ব্রাঞ্চটি যশোর শহরের আশ্রম রোডে অবস্থিত। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনার অভাব, পরিচালনা পর্ষদের স্বচ্ছতার সংকট ও অভ্যন্তরীণ লুটপাটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়ে। এর ফলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ গ্রাহক তাদের পাওনা টাকা পাচ্ছেন না।
যশোর ব্রাঞ্চের তথ্যমতে, এই অঞ্চলে বর্তমানে দুই হাজারের বেশি গ্রাহকের বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কেউ ৩ বছর, কেউ ১ বছর বা ৬ মাস আগে দাবি পাওয়ার যোগ্য হলেও টাকা মেলেনি। এর মধ্যে ৭১৬ জন গ্রাহকের পক্ষে দায়ের হওয়া মামলায় দাবি করা হয়েছে, তাদের এক কোটি ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৫ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হোমল্যান্ডের যশোর সার্ভিসিং সেন্টারের মাধ্যমে নিয়ম মেনে পলিসি গ্রহণকারী এসব গ্রাহকের মেয়াদ ২০১৯ সালে বিভিন্ন সময়ে পূর্ণ হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী চেক না দিয়ে পরিকল্পিতভাবে চেক না দেওয়া ও অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যা বেআইনি, অনৈতিক ও প্রতারণামূলক।
সাবেক এরিয়া ইনচার্জ সিহাব উদ্দিন জানান, তার মাধ্যমে এলাকার কয়েকশ গ্রাহক বীমা করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৪০ জনের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হলেও এখনো কেউ টাকা পাননি। ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা তাকে হেনস্তা করেন। নানা প্রতারণার কারণে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
হোমল্যান্ড যশোর ব্রাঞ্চের ডেপুটি ইনচার্জ তাহাজ্জেল হোসেন বলেন, “সত্যি বলতে কী, কোম্পানির ফান্ড এখন শূন্য। টাকা দেবে কোথা থেকে? শুধু ৭১৬ জন না, দুই হাজারের বেশি গ্রাহকের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসছেন, কথা শুনছি। ১৪ বছর ধরে এই কোম্পানিতে কাজ করছি, নিজের বাড়িও যশোরে, তাই গ্রাহকদের দুর্দশা বুঝি। চেষ্টা করছি বারবার কর্তৃপক্ষকে লিখে জানাতে, কিন্তু ফল হচ্ছে না।”
Leave a Reply