February 23, 2025, 9:49 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
চলতি মৌসুমের তিনটি বিশেষ উৎসবের শেষ বাজারে ফুলের উর্ধমুখী দাম পেয়েছেন যশোরের গদখালীর ফুল চাষীরা। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) গভীর রাত পর্যন্ত চলা বেচাকেনায় প্রায় কাঙ্খিত দাম পেয়ে খুশী ফুল চাষীরা।
ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালীর ফুল চাষীরা মূলত বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস, ইংরেজি নববর্ষ, বসন্ত, ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে সারা বছরের বেচাকেনা করে থাকেন। শীতকালকে তাদের কাছে পরিচিত ‘ফুল বিক্রির মৌসুম’ নামে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরের প্রায় ৬শ’ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ১৩ ধরণের ফুলের চাষ হয়। এবং এ ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক লোক জড়িত।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে ফুলচাষী রয়েছেন প্রায় ছয় হাজার।
এলাকায় উত্পাদিত ফুল বিক্রির জন্য গদখালীতে যশোর রোডের দুই ধারে রয়েছে দেশের বৃহত্তম ফুলের বাজার গদখালী। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠে ফুলের বাজার।
চাষী ও ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, বছরের পুরো মৌসুমে অন্তত দেড়শ থেকে দুইশো কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি করে থাকেন চাষীরা।
ইতোমধ্যে দুই মাসে তিনটি বড় দিবস পার হয়েছে যেখানে চাষীরা প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশী ফুল বিক্রয় করেছেন।
বৃহস্পতিবারের সকাল থেকে জমে উঠেছিল গদখালীর ফুলের বাজার। মৌসুমের শেষ উৎসবের শেষ মুহূর্তের বেচাকেনায় চরম ব্যস্ততা গেছে চাষী এবং পাইকারী ব্যবসায়ীদের। শেষ বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ব্যবহৃত গাঁদা, গ্লাডিওলাস, রজনিগন্ধা, জিপসি ও কামিনী পাতা।
বিভিনন্ন সূত্র জানিয়েছে কয়েকদিন ধরে ফুলের উর্ধ্বমুখী দাম পেয়েছেন চাষীরা। তাদের দাবি দুই সপ্তাহ আগে যে গøাডিওলাস ফুলের দাম ৪ থেকে ৬ টাকা দামে বিক্রি করছিলেন তা এখন ৮ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। প্রতিহাজার ৩০০ টাকা মূল্যের গাঁদা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৩০০ টাকা দামে, জিপসি ও কামিনি পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা, জারবেরা ৭/৮ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ২ থেকে ৩ টাকা।
পানিসারা গ্রামের ফুল চাষী আসকারী হোসেন জানান, “২১ ফেব্রুয়ারি বাজার ভালো যাওয়ায় আমরা খুশি। এবার গাঁদা ফুল সর্বোচ্চ ১৩০০ টাকা হাজার বিক্রি করেছি। গত তিনদিন ধরে গাঁদা, গ্লাডিওলাসের দাম ভালো যাচ্ছে।”
মাহবুবর রহমান নামে অপর এক চাষী জানান, “তিনি ৮ কাঠা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছিলেন। উৎপাদন খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে ৬০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। এছাড়া এক বিঘা গোলাপ চাষ করেছিলেন। ”এ বছর কাঙ্খিত দাম না পেলেও খরচ উঠে লাভে আছি,” তিনি যোগ করেন।
তারিকুল হক তারিক নামে অপর এক চাষী বলেন,আমরা মূলত উৎসব কেন্দ্রিক ব্যবসা করি। আজ শেষ উৎসবের শেষ বাজার। ভালো দাম পেয়েছি। এ বছর ৮ বিঘা জমিতে জারবেরা, গোলাপ, গাদা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ফুলের চাষ করেছি। সব মিলিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকার ফুল বিক্রি করেছি।খরচ বাদ ৬ লাখ টাকা লাভ হবে।”
গদখালী ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, “২১ফেব্রুয়ারির বাজারে চাহিদামত দাম পেয়েছেন ফুল চাষীরা। গত তিনদিন ধরেই বাজার চড়া। আশানুরূপ দাম পাওয়ায় চাষীরা খুশি।”
তিনি আরো বলেন, সামনে ২৬ মার্চ। গত ডিসেম্বর থেকে অদ্যাবধি পুরো মৌসুমে অন্তত দেড়শ কোটি টাকারও বেশি ফুল বিক্রি করেছন চাষীরা। তবে এটা গত মৌসুমের তুলনায় কম। তারপরও চাষীরা লাভেই থাকবেন বলে আশাবাদী।”
Leave a Reply