November 28, 2025, 7:38 am

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই–আগস্ট মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে। পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং আরেকটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল–১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার। প্যানেলের অন্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায় ঘোষণার সময় আদালত ছিল জনাকীর্ণ। আইনজীবীদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন জুলাই–আগস্টে নিহতদের কয়েকজন পরিবারের সদস্যও। আদালতে অডিও–ভিডিওসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয় এবং ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও সাক্ষীদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, সাভার, আশুলিয়া থেকে শুরু করে রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহারের ভিডিও প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর রিপোর্টের অংশও আদালতে পড়ে শোনানো হয়। এছাড়া শেখ হাসিনার বিভিন্ন ফোনালাপ, যার মধ্যে সে সময়ের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথোপকথনও রয়েছে—রায় ঘোষণার আগে তা প্লে করা হয়।
এই মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান দুজনই পলাতক এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। আদালত আসাদুজ্জামান খানকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়ায় সাবেক আইজিপি মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করে। প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদসহ আরও অনেকে যুক্তি উপস্থাপন করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ২৩ অক্টোবর সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। পরে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
এই মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ৩ আগস্ট এবং শেষ হয় ৮ অক্টোবর। এরপর ২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুল হত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ছিল ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার, যেখানে তথ্যসূত্র, জব্দতালিকা, দালিলিক প্রমাণ ও শহীদদের তালিকার বিস্তারিত সংযোজন রয়েছে। গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।