February 8, 2025, 9:18 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর চুয়াডাঙ্গার সেই আলোচিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের অধীনে সরকারি স্থাপনা নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের ঘটনায় দূর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলার চার্জ গঠন হয়েছে কুষ্টিয়ার একটি বিশেষ আদালতে।
গত সোমবার কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতের (দূনীতি ও বিশেষ অপরাধ বিচারে গঠিত আদালত) বিচারক আশরাফুল ইসলামের আদালতে এ অভিযোগ করা হয়। আলোচিত এ মামলায় আসামী করা হয়েছে ৪ জনকে।
আসামীগণ হলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের-এর স্বত্বাধিকারী মনির হোসাইন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প উপকরণ ক্রয় কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আয়ুব হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয়ের পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইংয়ের ভৌত অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স কনসোর্টিয়াম লি.-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সাত্তার।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌরসভার পাশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফাইটো স্যানিটারি ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৭৫০ বর্গফুট আয়তনের ‘উদ্ভিদ সংগ নিরোধ ল্যাবরেটরি ও অফিস ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর। ২০১৭ সালের জুনে ভবনটি হস্তান্তরের জন্য নির্ধারিত ছিল। ভবনটির প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হবার পর ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল ভবন নির্মাণকাজে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগ তুলে মিছিল করে ঐ এলাকার জনগন। ঘটনাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী প্রতিক্রিয়া হয়। পরে ওই প্রকল্প পরিচালক সাদেক ইবনে শামছসহ আরও দুই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
ভবনটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার ফার্মগেটের জয় ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
এ ঘটনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ তদারকি ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মেরিনা জেবুন্নাহারকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। মেরিনা জেবুন্নাহার বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয় ইন্টারন্যাশনালের মালিক মণি সিং, তদারকির দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সাত্তার, প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ আইয়ুব হোসেন ও অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনকে আসামি করে দামুড়হুদা থানায় একটি ফৌজদারি মামলা করেন।
এ ছাড়া জয় ইন্টারন্যাশনালকে কালো তালিকাভুক্ত করে অধিদপ্তর। এ ঘটনায় মণি সিংকে গ্রেপ্তার করা হলেও তিনি এখন জামিনে আছেন।
তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে প্রতিবেদন দাখিল করা করা হয়। পরে দন্ডবিধির ৪০৬ ও ৪২৭ ধারায় প্রতারণা ও ক্ষতি করার অভিযোগে করা মামলাটি চুয়াডাঙ্গার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দুর্নীতি দমন কমিশন কুষ্টিয়ার সমন্বিত কার্যালয়ে তদন্তের জন্য প্রেরণ করে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত কার্যালয় সূত্রে জানা যায় মামলাটির তদন্ত কাজ শেষে ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেয় দুদক। কিন্তু এ ধরনের মামলার জন্য নির্ধারিত কোর্ট না থাকায় মামলার চার্জ গঠনের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত কার্যালয়ের আইনজীবি আল-মুজাহিদ মিঠু জানান গত বছরের শেষের দিকে নির্দ্দিষ্ট করে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা আদালতের অধীনে এ ধরনের একটি আদালত গঠন করে একজন বিচারক (জেলা জজ সমপর্যায়ের) নিয়োগ দেয়া হয়।
তিনি জানান গত বছরের পুরো সময়টাও করোনা সংকটে আটকে থাকার কারনে এই মামলাটি বিচারিক আদালতে আনা যায়নি। তিনি বলেন খুব শিগগিরই মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
Leave a Reply