September 11, 2025, 3:53 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
ডাকসুর আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা/ ভিপি সাদিক কায়েম, জিএস ফরহাদ দেশে দাম ২৫০০, ভারতে যাচ্ছে ১৫০০ টাকা দরে ১২০০ টন ইলিশ রাজবাড়ীতে মোটরসাইকেল রেসে প্রাণ গেল দুই বন্ধুর কেরুর আধুনিকায়ন ১৩ বছরেও শেষ হয়নি, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি একাদশে ভর্তি শুরু, জেলা পর্যায়ে নন-এপিওতে ভর্তি ফি ৩ হাজার টাকা, ক্লাস ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত, আসছে মিড-ডে মিল ইউক্রেন চুক্তি মানতে না পারলে সামরিকভাবে লক্ষ্য পূরণ করবে রাশিয়া: পুতিন সংকটাপন্ন অবস্থায় ফরিদা পারভীন, চিকিৎসায় সহায়তায় প্রস্তুত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেলো সুপ্রিম কোর্টে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে মাছ রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ টন

কেটে ফেলা হচ্ছে কুষ্টিয়া হাসপাতাল সড়কের বড় বড় বৃক্ষ

দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/

রাস্তা সংস্কারের জন্য কুষ্টিয়া হাসপাতাল সড়কের বড় বড় রেইনট্রি বৃক্ষ কেটে ফেলা হচ্ছে। ১৬ বছর আগে সামাজিক বনায়ন হিসেবে এইসব বৃক্ষ রোপণ করেছিল কুষ্টিয়া পৌরসভা। মাত্র ১ লাখ ৬১ হাজার টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে ২০৩টি অক্সিজেনের এসব ভান্ডার কিনেছেন ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা। তিনি এরইমধ্যে ৬টি গাছ কেটেও ফেলেছেন। পাশে ছায়াতরু হিসেবে গাছগুলো রেখে সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
শহরের সাদ্দাম বাজার থেকে হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত ১ কিলোমিটারেরও কম এই সড়কটি। টেন্ডারের মাধ্যমে এর পাশের গাছগুলো কেটে নেয়ার অনুমতি পেয়েছেন কুষ্টিয়া সদর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওয়াহিদ মুরাদ। তিনি বর্তমানে হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। ওয়াহিদ মুরাদ বলেছেন, করোনার মধ্যে কোন কাজ নেই তাই এই টেন্ডারে অংশ নিয়েছি। প্রথমবার গত ২২শে মার্চ টেন্ডারে তিন জন অংশ নেয়। সেখানে আমি সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে তিন হাজার টাকা কম হওয়ায় পৌরসভা গাছগুলো আমাকে দিতে পারেনি। তিনি বলেন, টেন্ডারের সরকারি মূল্য ছিলো ১লাখ ৫৮ হাজার টাকা। পরের দফায় গত ৮ এপ্রিল টেন্ডারে ১ লাখ ৬১ হাজার টাকায় গাছগুলো তিনি পেয়েছেন।
ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, গাছগুলো কেটে নিতে পৌরসভা তাকে ১ মাস সময় দিয়েছে। তিনি ১৭ এপ্রিল থেকে গাছ কাটা শুরু করেছেন। ১৯ এপ্্িরল দুপুর পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৬টি গাছ। মুরাদ বলেন, টেন্ডারের শর্ত মোতাবেক সবগুলো গাছের শেকড় তুলে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে বেশ খরচ হবে। তাছাড়া ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে তার খরচ পড়ছে ১লাখ ৭৫ হাজার ৬শ টাকা। তাই এসব গাছের কাঠ ও খড়ি বিক্রি করে খুব একটা লাভ হবে না বলে মনে করছেন তিনি।
ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, স্থানীয় একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দেখে তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে টেন্ডারে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে ২০৩টি বড় বড় গাছ মাত্র ১ লাখ ৬১ হাজার টাকায় বিক্রি করার ব্যপারে কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, গাছগুলোর মূল্য কোন অবস্থাতেই ১০ লাখ টাকার নিচে নয়। তিনি টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। রফিকুল আলম বলেন, পরিবেশ- প্রকৃতির জন্য গাছগুলো রেখে দেয়া দরকার। এই গাছগুলোই ওই সড়ককে ছায়া দিয়ে রেখেছে। এতো অল্প টাকায় এতো মূল্যবান গাছ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সরওয়ার মুর্শেদ রতন বলেন, প্রকৃতির প্রতি মানুষের অত্যাচার বেড়েছে। প্রকৃতি প্রতিশোধও নিচ্ছে। করোনাভাইরাস তার একটি প্রমাণ। এসব গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দেয়া কোন দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে না বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, কোন গাছ কাটার পক্ষে আমি নই। তিনি যশোর রোডের গাছের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভারতের প্রান্তে গাছ রেখে সড়ক করা হলো আর বাংলাদেশে কেটে ফেলা হলো। কুষ্টিয়ার এই গাছগুলো রেখে সড়ক সংস্কার করা উচিৎ- বলেন তিনি।
কথা হয় পরিবেশবাদী খলিলুর রহমান মজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, লকডাউনের মধ্যে আমরা প্রতিবাদ করতে পারছি না। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন এ কারণেই হয়তো এই সময় বেছে নেয়া হয়েছে। খলিলুর মজু বলেন, কুষ্টিয়ায় সড়কের পাশে খুব বেশি গাছ নেই। এই সড়কের গাছগুলো রেখে দেয়ার আকুতি জানান তিনি। বলেন, পাশে দোকান পাট রয়েছে সেগুলো ভেঙ্গে সড়ক প্রশস্ত করতে পারে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, গাছ রেখে এই সড়ক সংস্কার করা সম্ভব নয়। হাসপাতালে রোগীদের যাতায়াতের জন্য সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। গাছগুলো কাটার পর প্রথমে সড়কটি মেরামত করা হবে। এর খানাখন্দ বন্ধ করে কার্পেটিং করে দেয়া হবে। এরপর সড়কটি প্রশস্ত করার চিন্তা রয়েছে পৌরসভার। আগামী বছর মার্চের দিকে সেই কাজ হবে বলে জানান প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম। সেসময় পৌরসভার পক্ষে এই সড়কে নতুন করে বৃক্ষরোপন করা হবে। তখন লাগানো হবে ফল ও ফুলের গাছ। তাছাড়া এসব গাছ সামাজিক বনায়নের। উপকারভোগীদের সঙ্গে চুক্তি করে ১৬ বছর আগে রোপণ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১৫ বছর পেরুলে গাছ কেটে ফেলার কথা। এখান থেকে ৭০ শতাংশ টাকা পাবেন সমিতির উপকারভোগীরা। বাকী টাকা পৌরসভার। রবিউল ইসলাম বলেন, টেন্ডারের সব নিয়ম মেনে একবার ভাল দাম না পাওয়ায় পরের বার টেন্ডার করা হয়েছে।
এদিকে বন বিভাগের পক্ষে বলা হয়েছে, সামাজিক বনায়নের এসব গাছ কাটতে তাদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। পৌরসভা সেটা করেনি। যশোর বন সার্কেলের বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করীম বলেন, বনজদ্রব্য পরিবহন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০১১ এর ৫ ধারায় বলা হয়েছে, বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন নয় এমন সড়ক ও জনপথ হতেও বনজদ্রব্য আহরণ, অপসারণ বা পরিবহনের জন্য ওই ভূমি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের ন্যূনতম জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর ফরম-৩ এ আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালকের আবেদনটি করার কথা। তবে, পৌরসভা বা কোন কর্তৃপক্ষ এমন কোন আবেদন বা অবহিতপত্র দেননি বলে জানান কুষ্টিয়া সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ছালেহ মোঃ সোয়াইব খান। তিনি বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ এই গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণের জন্য বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল মাত্র।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net