April 30, 2025, 3:57 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরাও উচ্চতর গ্রেড পাবেন রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল ও ডা. শফিকুর শুধু মার্চ মাসে চিন্থিত করা গেছে ৪৪২ নারী নির্যাতন, ১৬৩ ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ৩৬টি চুয়াডাঙ্গায় মসজিদে শিশু ধর্ষণের দায়ে মুয়াজ্জিনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ঝিনাইদহ সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফ’র গুলিতে এক বাংলাদেশী নিহত ট্রাম্প বিশ্বাস করেন/ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে সৌদি আরব ভারতের মোক্ষম অস্ত্র সিন্ধু চুক্তি/পাকিস্তানের ছটফটানি সেখানেই, যুদ্ধ প্রস্তুতির দাবি দু’দেশেরই কুষ্টিয়ার ১ জনসহ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৫ বিচারকের তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি একশ্রেণীর শিক্ষকদের সহায়তায় শিক্ষার্থীদের অসদুপায় অবলম্বন, এসএসসিতে সারা দেশে যা ঘটছে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে রুপা পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি, ৪ মাসে উদ্ধার ১০২ কেজি

কুষ্টিয়ার গৌরব বিচারপতি রাধাবিনোদ পালের জন্মবার্ষিকী পালিত

দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়ার গৌরব বিচারপতি রাধাবিনোদ পালের ১৩৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে তাঁর জন্মস্থান মিরপুরের কাকিলাদহ গ্রামে। ড. রাধাবিনোদ পাল মডেল স্কুলের উদ্যোগে সেখানে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভা শেষে কেক কাটা হয়। উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ।
বিগত শতাব্দের চল্লিশের দশক কিংবা তার আগে যে সব জাপানির জন্ম, তাদের অনেকেই যে ক’ জন ভারতবাসীর নাম জানেন, তাদের মধ্যে অন্যতম রয়েছেন বিচারপতি ডক্টর রাধাবিনোদ পাল। জাপানে তার পরিচিতির একটা বিশেষ কারণ আছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় ও আতœসমর্পনের পর আমেরিকার নেতৃত্বাধীন মিত্রবাহিনী নুরেমবার্গ ট্রায়ালের আদলে জাপানিদের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য টোকিও ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। ১৯৪৬ সালের এপ্রিল মাসে গঠিত ওই ট্রাইব্যুনালে ব্রিটিশদের মনোনীত একজন বিচারক ছিলেন কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও পরে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর রাধাবিনোদ পাল। মজার ব্যাপার, ট্রাইব্যুনালের অন্য সব বিচারক যুদ্ধাপরাধের দায়ে জাপানকে অভিযুক্ত করলেও, বিচারপতি পাল ” নট গিলটি ” রায় দেন। তাঁর বিবেচনায়, জাপানের ওই যুদ্ধ আগ্রাসী যুদ্ধ ছিল না, বরং আতœরক্ষার জন্যেই জাপান যুদ্ধ করেছে। এই বিষয়টি তখন খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, যদিও দীর্ঘ আটশো পৃষ্ঠার রায়ে দেয়া তাঁর বক্তব্যের যুক্তি ও সারবস্তু উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না । তথাপি সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে জাপান দোষী প্রমাণিত হয়, মন্ত্রী – সেনাপতি সহ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড এবং অনেকের দীর্ঘ মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ভারত তখন ছিল বৃটিশের উপনিবেশ, সেই পরাধীন ভারতের একজন স্বাধীনতাকামী মানুষ জাপানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সে দেশের সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন, জাপানিরা এখনো সেকথা স্মরণে রেখেছে।
রাধাবিনোদ পালের জন্ম ১৮৮৬ সালের ২৭শে ( মতান্তরে ৭ ) জানুয়ারি তৎকালীন নদীয়া, বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার সলিমপুরে তার দাদুর বাড়িতে। অন্যদিকে তার ঠাকুরদার বাড়ি নদীর এপারে মিরপুর উপজেলার আমলার কাছে কাকিলাদহ গ্রামে ( এটাই আমার সংগৃহীত তথ্য) । খুবই সাধারণ দরিদ্র পরিবারে তাঁর জন্ম, কেবল মেধা আর অধ্যবসায়ের জোরে নিজের বৃত্তির অর্থ এবং বিভিন্ন সময়ে নানা জনের বাড়িতে আশ্রিত থেকে তিনি জীবনে শুধু প্রতিষ্ঠিত নয়, দেশে- বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
রাধাবিনোদ ১৯০৩ সালে নওগাঁর ধুবলহাটি রাজা হরনাথ হাইস্কুল থেকে বৃত্তি নিয়ে এনট্রান্স ( ম্যাট্রিক ) এবং আবারো বৃত্তিসহ রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯০৫ সালে পাশ করেন। এরপর কোলকাতায় গিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৭ সালে গণিতশাস্ত্রে অনার্সসহ ই.অ এবং পরের বছর একই বিষয়ে গ.অ ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে রাধাবিনোদ প্রথমে দুই বছর এলাহাবাদ অ্যাকাউনটেন্ট জেনারেল অফিসে করণিক ছিলেন, এই সময় তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ই.খ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এবার তিনি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে গণিতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯২০ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে গ.খ ( মাস্টার অফ ল) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরআগেই তিনি কোলকাতা হাইকর্টে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন, এবার শিক্ষকতা ছেড়ে ১৯২১ সালে আইনপেশায় যোগদান করেন। এর বাইরে ১৯২৩ থেকে ১৯৩৬ তের বছর তিনি ল’ কলেজের প্রফেসর ছিলেন। ১৯২৪ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টর অফ ল ডিগ্রি প্রদান করে।
ডক্টর পাল তিন বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেগোর প্রফেসর অফ ল, ভারত সরকারের ইনকাম ট্যাক্স বিষয়ে লিগাল অ্যাডভাইজার ছিলেন ১৯৪১ থেকে ‘৪৩ সালের মধ্যে দু” বার তিনি হাইকোর্টের বিচারপতির দায়িত্বপালন করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালের উপাচার্যের ( ঠ. ঈ) পদ লাভ করেন এবং ১৯৪৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এই সময়ে ঘটে তার জীবনের এক স্মরণীয় ঘটনা। বৃটিশ সরকার তাকে টোকিও ট্রাইব্যুনালের অন্যতম বিচারক নিয়োগ করেন, যে কথা শুরুতেই বলা হয়েছে।
১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মবিভূষণ উপাধিতে সম্মানিত করেন। ১৯৬২ সালে তিনি আবার আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হন, ১৯৬৬ সালে শেষ সম্মান আসে জাপান থেকে। নিহন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক খখ.উ উপাধি দেয়, জাপানের সম্রাট তাঁকে ঋরৎংঃ ঙৎফবৎ ড়ভ ঝধপৎবফ ঞৎবধংঁৎব সম্মানে ভূষিত করেন। টোকিও ও কিয়োতো’ র মেট্রোপলিটন সরকারদ্বয় তাকে যথাক্রমে দুই নগরীর পক্ষ থেকে সম্মানিত করে।
সব সম্মান, সব গৌরব মাথায় নিয়ে ১৯৬৭ সালের ১০ ই জানুয়ারি বিচারপতি ডক্টর রাধাবিনোদ পাল পরপারের যাত্রী হন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net