December 8, 2024, 3:39 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ার চালের বাজার বাংলাদেশের আর সব চালের বাজারের বাইরে বলে মনে হয়। কারন এই চালের বাজার কার নিয়ন্ত্রণে সেটা কখনও বোঝা যায় না। শুধু চাল নিয়ে চালবাজিটা বোঝা যায়। এই চালবাজিতে চালকল মালিকরা দোষ দিয়ে থাকেন খুচরা ব্যবাসায়ীদের, আর খুচরারা দুষেণ কল মালিকদের। দুটিই কারবারী ; চালকারবারী। তবে চাপান-উতোর যেটাই চলুক ধান উৎপাদনের সাথে সর্ম্পকবিহীন এই গোষ্ঠীদুটোর দুটোই যে চালবাজ সেটা বোঝা যায়। কারন চলছে আমন মৌসুম।
জানা যাচ্ছে যখন চাল নিয়ে নানা কথা তখন কুষ্টিয়ায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি দুই টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি ধানের দাম বেশি থাকার কারণে চালের বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। সেইসঙ্গে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে পরিবহন খরচও। তাই চালের দামও দফায় দফায় বাড়ছে।
চলছে আমন ধানের মৌসুম। এ সময় চালের দাম কম থাকার কথা থাকলেও কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েই চলেছে।
তবে চালের বড় মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের মিল গেটে চালের দাম বাড়েনি বলে দাবি করেছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, মিল গেটে চালের দাম কম থাকলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
আমন ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভের শেষ নেই ক্রেতাদের। দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
কুষ্টিয়া শহরের পৌর বাজার এবং বড় বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণার পরপরই নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কুষ্টিয়ার বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি দুই থেকে তিন টাকা বেড়ে যায়।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কেনায় তাদেরকে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে।
অথচ খাজানগর এলাকার মিলাররা বলছেন, মিলগেটে চালের দাম বাড়ানো হয়নি। তারা আগের রেটেই চাল বিক্রি করছেন।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) শহরের পৌর বাজারে অটোরাইচ মিলে ভাঙানো মিনিকেট ধান ৬৪ টাকা, সাধারণ মিনিকেট চাল ৬২ টাকা, কাজললতা অটোরাইচ মিলের ভাঙানো চাল ৫৬ টাকা, কাজললতা সাধারণ ৫০, আঠাশ চাল অটো রাইচ মিলে ভাঙানো ৪৮ টাকা, বাসমতি চাল ৭৪ টাকা, বাসমতি সাধারণ ৭২ টাকা, কাটারীভোগ অটোরাইচ মিলে ভাঙানো চাল ৭০ টাকা, স্বর্ণা চাল ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখে গেছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা রেট চার্ট টাঙিয়ে বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছেন।
তবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে চালের দাম আগের মতোই রয়েছে বলে দাবি করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) খাজানগর মিলগেটে পাইকারি হিসেবে অটো রাইচ মিলে ভাঙানো মিনিকেট চাল ৫৯ টাকা কেজি, সাধারণ মিনিকেট চাল ৫৮ টাকা কেজি, আটো রাইচ মিলে ভাঙানো কাজললতা চাল ৫৩ টাকা, সাধারণ কাজললতা ৫০ টাকা, আটো রাইচ মিলে ভাঙানো আঠাশ চাল ৪৮, বাসমতি অটো রাইচ মিলে ৭০, সাধারণ বাসমতি ৬৯ টাকা এবং স্বর্ণা চাল ৩৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারের এক চাল ব্যবসায়ী জানান, মূলত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কুষ্টিয়ার বাজারে সব ধরনের চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়। এই দাম বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গত দুই সপ্তাহ ধরে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি সর্বনিম্ন দুই টাকা বেড়েছে।
এদিকে কুষ্টিয়ার বাজারে সব ধরনের ধানের দামও আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। বর্তমানে বাজারে গুটি স্বর্ণা ধান ৯৫০, স্বর্ণা ফাইভ ধান ১০৩০ টাকা, স্বর্ণা উনপঞ্চাশ ধান ১১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক মাস আগেও বাজারে মণপ্রতি এসব ধান ১৫০ থেকে ২শ টাকা বেশি করে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
চালের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান জানান, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে কুষ্টিয়াসহ সারা দেশের বাজারে চালের দাম বেড়েছে। ডিজেলের সঙ্গে ধান-চাল সব কিছুরই একটি যোগসূত্র রয়েছে। এছাড়া গত ৩০ অক্টোবর থেকে সরকারিভাবে চাল আমদানি বন্ধ থাকার কারণেও চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তবে বর্তমানে মিলগেটে চালের দাম বেশ কিছুদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, সরকারের কোনো নজরদারি না থাকার কারণে মিল গেটে দাম না বাড়লেও খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
Leave a Reply