November 21, 2024, 7:39 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনের নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ইবির হলগুলোর সিসিটিভি মনিটরিং বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
বহিষ্কৃত পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম ও মাওয়াবিয়া জাহান।
আদালতে বলেছেন, সাময়িক বহিষ্কৃত পাঁচজন কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না।
এছাড়া নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে তিন দিনের মধ্যে তার পছন্দমতো হলে আবাসিকতা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো.মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরল হক।
এর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সহ সভাপতি অন্তরাসহ অন্তত পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায় এ লক্ষ্যে গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটি। এছাড়া হল প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং প্রক্টরের উদাসীনতার কথা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর আদেশের জন্যে আজকের দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
তিনটি কমিটির মধ্যে হাইকোর্টের নিদের্শনায় গঠিত হয় একটি কমিটি, বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও হল কতৃপক্ষ করে একটি করে কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২০২২ সেশনের শিক্ষার্থী ফুলপরীকে র্যাগিং ও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এই অমানবিক, পাশবিক, শারীরিক, ন্যাক্কারজনক, জঘন্য ঘটনার সাথে সরাসরি চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম এবং মোয়াবিয়া জড়িত ছিলেন।
এছাড়া আল আমিন নামে একজনের সঙ্গে অন্তরার মোবাইল ফোনে কথা হয়। সেই ফোনে আল আমিন হুমকি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তরা প্রত্যেককে নির্দেশ দেয় প্রত্যেকে যেন ফুলপরীকে একটা একটা চড় মারে। আর লিমা ফুলপরীর মোবাইল কেড়ে নেয় এবং সবাই অন্তরার পা ধরতে ফুলপরীকে বাধ্য করে।
এছাড়া প্রভোস্ট হলে থাকা অবস্থাতেই অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, উর্মি, মোয়াবিয়ারাসহ অন্যরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করে। এক পর্যায়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বরাবরে মুচলেকা দিতে বাধ্য করে।
প্রতিবেদনে এ ঘটনায় প্রভোস্ট ড.শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মোমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানদের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিলো বলে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার কথাও উল্লেখ করা হয়।
এ প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় আদালত জানতে চান এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ৫জনকে হল থেকে বের করা হয়েছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইবির দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত প্রায় ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
অভিযোগ ওঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তারা ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করে তার ভিডিও ধারণ করে রাখেন।
এ ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয়ে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। হাইকোর্ট প্রশাসন ক্যাডার, বিচার বিভাগ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এ সময় দুই অভিযুক্তকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়।
সে অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কমিটি এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হয়। প্রতিবেদন পাঠানোর পর গতকাল সোমবার ৫ শিক্ষার্থীর আবাসিকতা বাতিল করা হয়।
Leave a Reply