April 25, 2025, 5:04 am
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় প্রকাশিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান’শিরোনামের প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন ও মানহানিকর বলা হয়েছে। এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে- আল-জাজিরায় আসা প্রতিবেদনটি মিথ্যা, মানহানিকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জামায়াতে ইসলামী চরমপন্থি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত কুখ্যাত ব্যক্তিরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে এটি তারই অংশ। আল-জাজিরার প্রতিবেদনটি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের একটি প্রতিচ্ছবি মাত্র। এই প্রতিবেদনের প্রধান ভাষ্যকার ডেভিড বার্গম্যানকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সরকারিভাবে ঘোষিত মৃত্যুর সংখ্যা চ্যালেঞ্জ করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ দোষী সাব্যস্ত করেছিল।
প্রতিবেদনের মূল ‘তথ্যদাতা’ আল-জাজিরা ঘোষিত একজন ‘সাইকোপ্যাথ’ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধী বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে এই নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকার এক বিন্দু প্রমাণও হাজির করা হয়নি বলেও দাবি করেছে বাংলাদেশ। মানসিকভাবে অস্থির প্রকৃতির একজনের কথার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া একটি আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেলের জন্য বড় ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের নৃশংস গণহত্যার কথা উল্লেখও করা হয়নি। জামায়াতের অপরাধীরা সে সময় লাখ লাখ বেসামরিক বাঙালিকে হত্যা করে এবং ২ লাখেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ করে। এটা আল-জাজিরা এবং তাদের প্রতিবেদনের প্রধান ভাষ্যকার ডেভিড বার্গম্যানের রাজনৈতিক পক্ষপাতেরই প্রতিফলন, যে বার্গম্যান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
‘আল জাজিরার প্রতিবেদনে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মূল সূত্র একজন সন্দেহভাজন আন্তর্জাতিক অপরাধী, যাকে আল জাজিরাই ‘সাইকোপ্যাথ’আখ্যায়িত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার সামান্যতম প্রমাণও সেখানে নেই। আর মানসিক ভারসাম্যহীন কারও কথার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া একটি আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেলের জন্য বড় ধরনের দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে জামায়াতে ইসলামীর মদদপুষ্ট কয়েকজন দণ্ডিত পলাতক অপরাধী এবং কুখ্যাত ব্যক্তি তাদের চিরাচরিত ছকে বাংলাদেশবিরোধী এই অপপ্রচার সাজিয়েছে, যারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উগ্র গোষ্ঠী এবং সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে আল জাজিরার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কিছু উগ্রপন্থি ও তাদের সহযোগী, যারা লন্ডন এবং বিভিন্ন জায়গায় থেকে এসব করছে, তাদের এই বেপরোয়া ‘অপপ্রচারকে’বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাখ্যান করছে। বাংলাদেশের অসাধারণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য যেখানে সরকারের ভূমিকা প্রমাণিত, সেই অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সরকারকে কক্ষচ্যুৎ করার লক্ষ্য নিয়ে সাজানো হীন রাজনৈতিক ছক বাস্তবায়নে আল জাজিরা নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে, এটা হতাশাজনক।
‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পাঠানো বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
সেনাসদর দপ্তরের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আল জাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স ম্যান’ শিরোনামের ওই সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যে মহলটি দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় তারাই এ কাজ করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আল জাজিরায় প্রচারিত সংবাদে কণ্ঠ দেয়া ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিকৃত তথ্য দেয়ার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজাপ্রাপ্ত। এছাড়া প্রতিবেদনে সামি নামে যাকে দেখানো হয়েছে, সে মাদক গ্রহণের দায়ে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে বহিষ্কৃত।
এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করা। কিন্তু সেই চেষ্টা কখনোই সফল হবে না বলেও সেনা সদরদপ্তরের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এই প্রতিবেদন প্রচার করে আল-জাজিরার মতো একটি গণমাধ্যম আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের সাথে নিজেদের জড়িয়েছে। যা কখনোই প্রত্যাশিত নয় বলে জানানো হয় সেনা সদরদপ্তরের পক্ষ থেকে।
Leave a Reply